পালানোর আগে দিল্লির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা
টুইট ডেস্ক: ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১২টার পরপরই ঢাকা থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আসে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ফোনকল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর পরবর্তীতে দেশটির পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
পরিস্থিতির তাৎপর্য এতটাই ছিল যে, এই ফোনকলগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছ থেকে সরাসরি রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন।
প্রথম ফোন: শেখ হাসিনার সরাসরি অনুরোধ
প্রথম ফোনটি এসেছিল শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে। ফোন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ভারতের প্রটোকল অনুযায়ী এমন উচ্চপর্যায়ের পরিস্থিতিতে সাধারণত দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যেই সরাসরি কথা হয়। যদিও জয়শংকর সরাসরি শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করেননি, তবে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ফোনের প্রান্তে শেখ হাসিনাই ছিলেন।
এই ফোনালাপে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ‘তখনকার মতো’ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ করেন এবং বলেন, তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই মুহূর্তে দিল্লি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে তার অনুরোধে সম্মতি জানায়।
দ্বিতীয় ফোন: সামরিক পর্যায়ের ‘ক্লিয়ারেন্স’ অনুরোধ
প্রথম ফোনের কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে দ্বিতীয় ফোনকল। এটি ছিল বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতের এয়ারফোর্স কমান্ডকে। এতে অনুরোধ করা হয়, শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমান যেন ভারতের নির্দিষ্ট একটি বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করতে পারে—এর জন্য প্রয়োজনীয় ‘ক্লিয়ারেন্স’ বা অবতরণ অনুমতি দেওয়া হোক। ভারত সেই অনুমতিও দ্রুত অনুমোদন করে।
ফোনকলের পেছনের প্রেক্ষাপট
দ্বিতীয় এই ফোনকলটি ছিল আরও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সকালেই সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়, যা তিনি গ্রহণ করেন। এরপরই দিল্লিতে প্রথম ফোনটি করেন তিনি।
দিল্লির পক্ষ থেকে দেওয়া আশ্বাস ছিল মূলত একটি ‘সম্মানজনক প্রস্থানের’ পথ। এই উদ্যোগের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা ও উচ্চপর্যায়ের ক্লিয়ারেন্স দ্রুত নিশ্চিত করা হয়।
কূটনৈতিক বিশ্লেষণ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন মাত্রা উঠে এসেছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার এভাবে দিল্লির কাছে আশ্রয় অনুরোধ করাটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। সেইসঙ্গে ভারত-নির্ভরতামূলক পররাষ্ট্রনীতির ফলাফল হিসেবেও অনেকে এটিকে দেখছেন।
তথ্যসূত্র: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকরের পার্লামেন্ট বক্তব্য ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র