তারাগঞ্জে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে রেকর্ড সাফল্য

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা করেছে নজির, দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে!

রংপুর থেকে আবদুল্লাহিল মতিন শাহীন: রংপুর বিভাগের তারাগঞ্জ উপজেলা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে নজির গড়ে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় মূল্যায়নে দেশের সব উপজেলা পর্যায়ে তারাগঞ্জ দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে এবং রংপুর বিভাগের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান লাভের গৌরব অর্জন করেছে।

এই সাফল্যের ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা দেশসেরা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের যৌথ মূল্যায়নে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে তারাগঞ্জ উপজেলা নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩৩.৪০ শতাংশ অর্জন করে। দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পায় চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলা (১৩৫.২২%) এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকে একই জেলার সীতাকুন্ড উপজেলা।

এই সাফল্য কেবলমাত্র পরিসংখ্যানের জন্য নয়; বরং তারাগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, জনপ্রতিনিধি, সচিব, গ্রাম পুলিশ, ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সম্মিলিত কাজের ফলাফল। নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, স্কুল-কলেজে প্রচারাভিযান চালানো এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা বলেন, এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক এবং ভবিষ্যতেও আমরা উন্নতির শীর্ষে থাকতে পারি।”

সয়ার ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, “ডিজিটাল নিবন্ধনের কারণে নাগরিকরা দ্রুত ও নির্ভুল সেবা পাচ্ছে। আমাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ অনেক সহজ হয়েছে।”

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস উদ্দিন বলেন, “নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট, জমি রেজিস্ট্রি ও সরকারি সেবা গ্রহণের জন্য এটি অপরিহার্য।”

যদিও তারাগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পর্যায়ে বড় সাফল্য অর্জন করেছে, তবু রংপুর বিভাগ মোটেও পিছিয়ে আছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে বিভাগে জন্ম নিবন্ধনের হার ছিল মাত্র ৩২ শতাংশ, মৃত্যু নিবন্ধনের হার ছিল ৩৫ শতাংশ। রংপুর জেলার হার আরো কম—ক্রমে ২৪ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ। বিশেষ করে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রংপুর জেলা ছিল জাতীয়ভাবে শীর্ষে।

তারাগঞ্জ উপজেলার ১৩৩ শতাংশ অর্জন একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মতে, এই উন্নতির পেছনে রয়েছে কঠোর তদারকি, নিয়মিত মনিটরিং ও পুরস্কারভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলা।

বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম এবং অন্তত ৫০ শতাংশ মৃত্যু নিবন্ধনের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে তারাগঞ্জ উপজেলা।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই সাফল্য শুধু তারাগঞ্জ নয়, দেশের অন্যান্য উপজেলাগুলোর জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।