জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও সাহসী সাংবাদিকতার মূল্য

আব্দুল্লাহিল মতিন (শাহীন), রংপুর: জুলাই ২০২৪—বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। ঠিক এই সময়েই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ, যার অন্যতম কেন্দ্র ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

১৬ জুলাই সংঘর্ষে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। কিন্তু সেই ঘটনার প্রতিচ্ছবি যদি কারও চোখে পৌঁছে থাকে, তাহলে তা সম্ভব হয়েছে সাহসী সাংবাদিকদের নির্ভীক উপস্থিতি এবং সাহসী রিপোর্টিংয়ের কারণে।

সম্প্রতি (৩ আগষ্ট) ঢাকার তথ্য ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে রংপুরের ৯ জন সাংবাদিককে সাহসী সাংবাদিকতার জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন এনটিভি, যমুনা টিভি, দৈনিক যুগান্তর ও স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সত্য ঘটনাপ্রবাহ ধারণ ও সম্প্রচারে পিছপা হননি।

সাহসী সাংবাদিকতা কি আজও নিরাপদ?

সাংবাদিকতা কেবল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যম নয়—এটি একধরনের দায়িত্ব ও নৈতিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যখন সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি থাকে, তখনও কি তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের সময় ক্যামেরা পার্সনদের পেটানো হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়েছে—এসব বাস্তবতা আমাদের ভাবায়।

রংপুরের ৯ সাংবাদিক যে সম্মাননা পেয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এটিই যেন শেষ না হয়। সাহসী সাংবাদিকতার পেছনে থাকা ত্যাগ, রক্ত, ঘাম এবং পেশাদারিত্বকে রক্ষা করতে হবে রাষ্ট্র, সমাজ এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও।

তথ্যের সত্যতা বনাম তথ্যের ভয়

এই সময়ে এসে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা, ভুল নীতির সমালোচনা করা কিংবা জনস্বার্থে তথ্য প্রকাশ অনেক সময় “ঝুঁকিপূর্ণ” হয়ে দাঁড়ায়। অথচ জনগণ জানার অধিকার চায়। একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র তখনই গড়ে ওঠে, যখন সাংবাদিকরা ভয়হীনভাবে কাজ করতে পারে।

রংপুরের এই ৯ সাংবাদিক প্রমাণ করেছেন—সাংবাদিকতা যদি সত্যের পথে হয়, তা কখনও হারায় না, বরং ইতিহাস হয়ে ওঠে।

আমরা মনে করি—সাহসী সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুরক্ষা দিতে হবে। সাংবাদিকতার মাঠ পর্যায়ে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

সাহসী রিপোর্টিংয়ের জন্য আরও বেশি স্বীকৃতি, বীমা সুবিধা এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

আজ যারা ক্যামেরা হাতে মাঠে, কাল তারা হতে পারেন আমাদের ইতিহাসের রক্ষক। তাই সাহসী সাংবাদিকতা যেন হারিয়ে না যায়, তার জন্য আমাদের সকলের দায়বদ্ধতা রয়েছে।