ব্যাংকিং খাতে এত লুটপাট কোথাও হয়নি: অর্থ উপদেষ্টা
“বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে, তা আর কোনো দেশে হয়নি” — অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন
অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে যে ধরনের লুটপাট হয়েছে, তা পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা এবং সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে মিরপুরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজে আয়োজিত দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ থেকে যেভাবে টাকা পাচার হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে যেভাবে লুটপাট হয়েছে— সেটি পৃথিবীর কোনো দেশে হয়নি। এ এক নজিরবিহীন দুর্নীতি, যা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য ব্যাংকে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, কৃষি ব্যাংকের অবস্থা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো। তবুও এখানেও আমাদের সাবধান থাকতে হবে, যেন কোনোভাবে অনিয়ম বা দুর্নীতি ঢুকে না পড়ে।”
১. ব্যাপক লুটপাট ও টাকা পাচার
অর্থ উপদেষ্টার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রভাবের কারণে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি অনেক ব্যাংকই ঋণের বিপরীতে জামানত ছাড়াই বড় অঙ্কের টাকা বিতরণ করেছে, যা আদায় হয়নি। এর ফলে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২. প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংকট আরো গভীর হয়েছে। যারা এই খাতের দায়িত্বে ছিলেন, তারা অনেক সময় রাজনৈতিক চাপ বা ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করেছেন।
৩. কৃষি ব্যাংকের তুলনামূলক সাফল্য
কৃষি ব্যাংক তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, “এ ব্যাংক এখনো সরাসরি কৃষক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
আর্থিক খাত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “যতদিন আমি দায়িত্বে আছি, ততদিন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত ও সামগ্রিক আর্থিক খাতের সংস্কারে কাজ চালিয়ে যাবো। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা আনতে হবে। খেলাপি ঋণ ও অর্থপাচার বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের সততা, পেশাদারিত্ব ও জনসেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
কৃষি ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অর্থ উপদেষ্টা নিজে। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু মোকাবিলায় আমাদের সব ব্যাংকেরই ভূমিকা রাখতে হবে। একটি সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), নির্বাহী পরিচালকগণ এবং ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে সমালোচনার ঝড় বইছে, তার প্রেক্ষাপটে একজন অর্থ উপদেষ্টার এমন প্রকাশ্য বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বক্তব্য দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবি আরও জোরালো করলো।