৪ আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও সেনা হস্তক্ষেপ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪ আগস্ট: সহিংসতার রক্তাক্ত দিন ও সরকারের দমননীতির প্রতিক্রিয়া
টুইট ডেস্ক: ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট—বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিভীষিকাময় দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাক ও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দিন সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
সরকারের দমনমূলক আচরণ, পুলিশের গুলি, এবং ক্ষমতাসীন দলের ‘সন্ত্রাসী হামলা’র অভিযোগ এই দিনটিকে বাংলাদেশের গণআন্দোলনের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
শাহবাগে ছাত্র-জনতার সমাবেশ ও গুলিবর্ষণ
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজধানীর শাহবাগ। রাত ১২টার পর ধারণ করা এক ছবিতে দেখা যায়, ছাত্র-জনতা “বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ” শীর্ষক স্লোগানে মুখরিত হয়ে সমবেত হয়েছে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার মুহূর্ত এবং প্রতিবাদকারীদের পাল্টা প্রতিরোধের চিত্র ফুটে উঠেছে ঐ ছবিতে। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা থাকলেও, পুলিশের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, যা ব্যবহারের মাধ্যমে বহু প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে।
সিরাজগঞ্জে থানা হামলা ও প্রাণহানি
একটি পৃথক ছবিতে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সামনে ধ্বংসাবশেষ ও অগ্নিসংযোগের চিহ্ন দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সেখানে ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হন। একই দিনে কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরও এক পুলিশ সদস্য নিহত হন বলে জানা যায়। এই ঘটনাগুলো সরকারের ওপর আন্দোলনের তীব্রতা ও জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে বিশ্লেষিত হচ্ছে।
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভূমিকা
চোখে পড়ে আন্দোলনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায়, তারা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। এই ঘটনায় সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে।
সংঘর্ষের বিস্তার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা
চাঁদপুর, বরিশাল, দিনাজপুরসহ দেশের অন্তত ৫০টি জেলায় সরকারি দপ্তর, আওয়ামী নেতাদের বাড়ি ও যানবাহনে হামলা চালানো হয়। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে। সরকারের পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েনের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় এবং আন্দোলনকারীদের প্রাণরক্ষা ও সহিংসতা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাজনৈতিক পরিণতি: শেখ হাসিনার পতন
৪ আগস্টের ঘটনার ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাপক প্রাণহানি, সহিংসতা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘটে। পরে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যার ভিত্তি এই আন্দোলনের মাধ্যমেই স্থাপিত হয়।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছিল শুধু একটি আন্দোলনের দিন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দমননীতির বিরুদ্ধে জনতার প্রতিরোধ, রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা ও গণতন্ত্রের নতুন যাত্রার এক ঐতিহাসিক বাঁক। এই দিনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তারা ইতিহাসের পাতায় শহীদ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।