রাজশাহীর তরুণদের মধ্যে বিষণ্নতা বাড়ছে, ঝুঁকিতে ২১-২৪ বছর বয়সীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী শহরের তরুণদের মধ্যে বিষণ্নতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, নগরের ৫৭ শতাংশের বেশি তরুণ বিষণ্নতায় ভুগছেন, যেখানে তরুণীদের হার ৬২.১ শতাংশ।
গবেষণাটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘থাই জার্নাল অব পাবলিক হেলথ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে রাজশাহীর কাজলা, তালাইমারী, সাহেববাজার ও বিন্দুর মোড় এলাকার ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৪৫০ জন তরুণ-তরুণী অংশ নেন।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে ২১-২৪ বছর বয়সীরা
তথ্য অনুযায়ী, ২১-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার ৪৮.৭ শতাংশ, যা অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় বেশি। গবেষকেরা বলছেন, ক্যারিয়ার অনিশ্চয়তা, প্রতিযোগিতা ও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা এ বয়সীদের মানসিক চাপে ফেলছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারেই মূল সংকট
বিষণ্নতার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ও নেতিবাচক অনলাইন কনটেন্ট।
গবেষণায় ব্যবহৃত হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘PHQ-9’ স্কেল, যেখানে:
১৭.৩% গুরুতর বিষণ্নতায়
২০% মাঝারি বিষণ্নতায় ভুগছেন
বিশেষ করে ফেসবুক, এক্স (টুইটার), পিন্টারেস্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার তুলনামূলক বেশি। দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান, তাদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং আত্মহত্যার চিন্তা বেশি দেখা গেছে।
কোন কনটেন্টে বিষণ্নতা বাড়ে?
বিষণ্নতার হার বেশি পাওয়া গেছে যারা সেলিব্রেটি, মডেল, গেমিং, ফানি ভিডিও ও পোষা প্রাণীর পেজ নিয়মিত অনুসরণ করেন। গবেষকেরা বলছেন, এসব কনটেন্ট বাস্তবতা থেকে দূরে এবং তরুণদের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি করে।
অন্যদিকে, পরিবার-বন্ধু, আত্মীয়, সংবাদ বা শিক্ষামূলক পেজ অনুসরণকারীদের মানসিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষকদের সুপারিশ
প্রধান গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, “ডিজিটাল সংযোগের যুগে তরুণরা অনলাইনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলছে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ।”
সমাধানের জন্য গবেষকেরা কিছু সুপারিশ দিয়েছেন:
স্কুল-কলেজে ডিজিটাল সচেতনতা কর্মসূচি
অভিভাবকদের সন্তানদের স্ক্রিন টাইমে নজরদারি
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ক্যাম্পেইন
সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় সতর্কতা
কনটেন্ট অ্যালগরিদমে নিয়ন্ত্রণ
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, “বাংলাদেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে, ততই মানসিক স্বাস্থ্য ও সহনশীলতা নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তা না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও ছড়িয়ে পড়বে।”