ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন হবে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন, পরিবারে সিদ্ধান্ত

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের মৃত্যু: পরিবার চায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন

টুইট ডেস্ক: সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অঙ্গনে। আকস্মিক এ মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও আলোড়ন।

তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার লাশের ময়নাতদন্ত না করে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সোমবার সাবেক সেনাপ্রধানের ফুফাতো বোন ও চিকিৎসক ডা. নজিবুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রথমে পরিকল্পনা ছিল লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করার। কিন্তু পরে পরিবারের সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সিদ্ধান্ত নেন।”

হঠাৎ মৃত্যু, রহস্যময় পরিস্থিতি

জানা যায়, ২০২৩ সালের একটি ডেসটিনি গ্রুপ সংশ্লিষ্ট মামলায় হাজিরা দিতে রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে ঢাকায় নিজ বাসা থেকে চট্টগ্রামে আসেন সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ। বিকেল ৫টার দিকে কাজির দেউড়ির চট্টগ্রাম ক্লাবে গিয়ে তিনি ওঠেন। আদালতে হাজিরার সময় ছিল পরদিন সোমবার সকাল ১১টায়।

কিন্তু সে হাজিরা আর দেওয়া হলো না। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম ক্লাব কর্তৃপক্ষ সাবেক সেনাপ্রধানের কক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, “ক্লাব কক্ষে তিনি একাই অবস্থান করছিলেন। প্রাথমিকভাবে কোনো সংঘর্ষ বা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।”

দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন: মৃত্যুর আগেই চোখ দান

তার মৃত্যু যেমন আকস্মিক, তেমনি মৃত্যু পরবর্তী মানবিক সিদ্ধান্তও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ মৃত্যুর আগেই চক্ষুদান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার পরিবার সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

কর্মজীবনের ঝলক

১৯৭০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পদাতিক কোরে কমিশন লাভ করেন হারুন-অর-রশিদ। যদিও তিনি শুরুতে ইঞ্জিনিয়ার কোরে যেতে আগ্রহী ছিলেন, কোম্পানি কমান্ডারের পরামর্শে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার প্রথম পোস্টিং হয় কুমিল্লার ৪র্থ ইবিআর-এ।

একজন দক্ষ ও শিক্ষিত সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে জর্জিয়ায় বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি আর্মি স্টাফ কলেজ এবং পদাতিক ও কৌশল স্কুলে শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার লাশ আজ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হতে পারে এবং পরবর্তীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

সাবেক এই সেনাপ্রধানের মৃত্যুতে রাজনৈতিক, সামরিক এবং নাগরিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জাতীয় ও মানবিক দায়িত্ব পালনের এক উজ্জ্বল উদাহরণ রেখে চিরবিদায় নিলেন হারুন-অর-রশিদ।