পর্যটকশূন্য কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’, ক্ষতি ছাড়াল ১ হাজার কোটি রুপি

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন: বাংলাদেশি পর্যটক হারিয়ে স্তব্ধ কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’, এক বছরে ক্ষতি ১ হাজার কোটি ছাড়াল।

টুইট ডেস্ক: কলকাতার নিউ মার্কেটের পাশের ‘ফ্রি স্কুল স্ট্রিট’ ও ‘মার্কুইস স্ট্রিট’ এক সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে মুখর থাকত। কম দামে হোটেল, দেশি খাবার, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য এলাকা দুটি পরিচিত ছিল ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে।

কিন্তু গত এক বছর ধরে সেই অঞ্চল কার্যত পর্যটকশূন্য। এক সময়ের জমজমাট রাস্তাঘাট এখন নীরব, দোকানপাটে নেই আগের মতো ভিড়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই স্থবিরতায় এক বছরে ক্ষতি ছাড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপি।

আন্দোলনের পর পর্যটন বন্ধ

২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশিদের কলকাতা যাত্রা। এতে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খায় ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকা। ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকা।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান জানান, “আগে প্রতিদিন ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো। এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২০ শতাংশে। রেস্তোরাঁ, হোটেল, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা সবখানেই ধস।”

ভিড় হারানো ট্রাভেল এজেন্সি ও হোটেল ব্যবসা

মার্কুইস স্ট্রিটের ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, “আগে প্রতিদিন কয়েকটি বাস বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে আসত। পার্কিং পাওয়া যেত না। এখন পর্যটকের ছায়াও নেই।”

একই অবস্থা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ও। ইনতেজার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের ব্যবসা শুধু বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন টিকে থাকার সংগ্রাম করছি।”

রেস্তোরাঁ বন্ধ, চাকরি হারানোর হিড়িক

এই এলাকায় ছোট-মাঝারি প্রায় ৪০ শতাংশ রেস্তোরাঁ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। যারা এখনো খোলা রেখেছে, তারা কর্মী ছাঁটাই করে চালাচ্ছে। ‘রাধুনী’ রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক জানান, “ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এভাবে চালিয়ে যাওয়া কঠিন।”

অনেকে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার নতুন করে দেনার ফাঁদে পড়েছেন।

আয়ের উৎসহীন সাধারণ মানুষ

যারা হোটেল কর্মী, গাইড, ড্রাইভার কিংবা খাবার সরবরাহকারী ছিলেন, তাদের এখন কাজ নেই বললেই চলে। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল জানান,

“দুইটি গাড়ি কিনেছিলাম পর্যটকদের ভাড়ার জন্য। এখন মাসে ৫-৬টা বুকিং পাই, সেটাও স্থানীয়, যারা সঠিক ভাড়াও দিতে চায় না। অথচ মাসে দেড় লাখ রুপি ইএমআই দিতে হয়।”

ক্ষতির অঙ্ক বেড়েই চলেছে

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধুমাত্র ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিটেই ক্ষতি ১ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। আর নিউ মার্কেট ও বুররাবাজার অঞ্চল যুক্ত করলে এই ক্ষতির অঙ্ক ৫ হাজার কোটি রুপিরও বেশি।

ফিরবে কি মিনি বাংলাদেশের হারানো প্রাণ?

ব্যবসায়ী মহল ও স্থানীয়রা বলছেন, বাংলাদেশি পর্যটক না ফিরলে পরিস্থিতির উন্নতি অসম্ভব। মিনি বাংলাদেশ এখন শুধুই অতীত স্মৃতির অংশ।

তবে আশা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটকরা আবার ফিরবেন, আর ফিরবে এই এলাকার হারানো রং ও চেনা কোলাহল।