শেখ হাসিনার ‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’ নির্দেশ: ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য

ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় সাক্ষী ইমরানের জবানবন্দি: শেখ হাসিনার ‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’ নির্দেশ শুনেছিলেন তিনি

টুইট ডেস্ক: ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান।

তিনি আদালতে জবানবন্দিতে দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী।

সোমবার (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ তিনি সাক্ষ্য দেন।

শেখ হাসিনার পরিদর্শন ও নির্দেশ

ইমরান জানান, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিজয়নগরে পানির ট্যাংক এলাকার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে তার বাঁ পায়ে, হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। পরে তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি হন।
২৬ বা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শেখ হাসিনা হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে তিনি ইমরানের সঙ্গে কথা বলেন।

ইমরান বলেন, “আমি তাকে ‘ম্যাডাম’ বললে তিনি বলেন, আমাকে ‘আপা’ বলো। এরপর তিনি জানতে চান, আমাকে গুলি করেছে কে? আমি বলি, ‘পুলিশ গুলি করেছে, তবে কারা ছিল ঠিক চিনতে পারিনি।’”

এরপর শেখ হাসিনা হেল্পডেস্কে গিয়ে বলেন, “নো ট্রিটমেন্ট, নো রিলিজ”। ইমরান এই কথা নিজ কানে শুনেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে জানান। তিনি তখন কথাটির অর্থ বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারেন, এটি ছিল চিকিৎসা না দিয়ে তাকে হাসপাতালে আটকে রাখার নির্দেশ।

অস্ত্রোপচার হয়নি, পা কেটে নেওয়ার প্রস্তুতি

জবানবন্দিতে ইমরান আরও বলেন, ওই নির্দেশের পর তার জরুরি অস্ত্রোপচার বিলম্বিত হয়, প্রয়োজনীয় ওষুধও হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়নি। তার বাবা চেষ্টা করেও তাকে ছাড়িয়ে নিতে পারেননি। এমনকি, তার পা কেটে তাকে কারাগারে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল বলে দাবি করেন ইমরান।

তিনি বলেন, “আমি তখন বুঝতে পারি, আমাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে জেলে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।”

আসামিদের অবস্থা

এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। আদালত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করেছে। অপর আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হন এবং দোষ স্বীকার করেন। তাকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এর আগে, মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ সাক্ষ্য দেন।

বিচারকাজের অগ্রগতি

রোববার (৩ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার সূচনা বক্তব্য এবং প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে মামলার কিছু অংশ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দেশে এই বিচারকে আরও দৃশ্যমান ও নজরকাড়া করে তুলেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলাটি জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।