রংপুর অঞ্চলে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ সম্পন্ন, এখন শুধু সংযোগের অপেক্ষা

আব্দুল্লাহিল মতিন শাহীন, রংপুর: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বগুড়া থেকে সৈয়দপুর ইপিজেড পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্প এখন শুধু বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বিসিক শিল্পনগরী, এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন আরএফএল, জিকে গ্রুপ এবং আকিজ গ্রুপ গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে।

রংপুর বিভাগের উদ্যোক্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, গ্যাস সংযোগ চালু হলে অঞ্চলটির শিল্পায়নে নতুন গতি আসবে। ভারী শিল্প ছাড়াও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য গ্যাস সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ বলেন, “গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে রংপুর অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, এবং ঢাকামুখী কর্মজীবনের চাপ কমে আসবে।”

চেম্বার সভাপতি এমদাদুল হক জানান, “বর্তমানে গ্যাসের অভাবে স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছে। গ্যাস সংযোগ পেলে উৎপাদন খরচ কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে, আর এতে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে নতুন প্রাণ ফোটবে।”

অর্থনীতিবিদ রোকেয়া আনোয়ার মনে করেন, রংপুর এখনও বাজেট বৈষম্যের শিকার। তিনি বলেন, “রংপুরের মতো পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে গ্যাস সংযোগের অগ্রাধিকার প্রয়োজন। গ্যাসের দাম তুলনামূলক কম রাখা হলে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হবে এবং নদী ভাঙন এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”

এসএমই বিশেষজ্ঞ ড. তাসকিনুর রহমান বলেন, “যদি বৃহত্তর উত্তরবঙ্গে গ্যাস সংযোগ চালু হয়, তাহলে এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও উদ্যোমী তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এটি হবে এক বিশাল সুযোগ। দীর্ঘদিন অবহেলিত এই জনপদে শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। শুধু বড় শিল্প নয়—কুটির শিল্প, প্রসেসিং ইউনিট, খাদ্য উৎপাদন ও প্যাকেজিংসহ বহু এসএমই প্রতিষ্ঠান এই সংযোগের সুফল ভোগ করবে। এতে রংপুর অঞ্চল হবে একটি প্রাণবন্ত শিল্পাঞ্চল।”

পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) রংপুর, পীরগঞ্জ ও নীলফামারী গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানিয়েছেন, “গত ৩০ জুন পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হয়েছে। ডিস্ট্রিবিউশন লাইন ইতোমধ্যে রংপুর বিসিক, সৈয়দপুর বিসিক ও উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখন শিল্প কারখানাগুলোতে সংযোগ প্রদানের কাজ চলছে।”

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর উত্তরের এই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে কেবল শিল্প প্রতিষ্ঠানই নয়, পুরো অঞ্চল পাবেন অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের সুযোগ। হাজারো মানুষ নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত হবে এবং রংপুর জেগে উঠবে একটি কর্মমুখর ও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক কেন্দ্রে।