ধর্মীয় সভার নামে ২২ কোটি টাকার চাল লোপাট, দুদকের চার্জশিট
ধর্মীয় সভার নামে ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ: সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট ।
টুইট ডেস্ক: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ধর্মীয় সভার নামে সরকারি বরাদ্দকৃত ৫ হাজার ৮২৩ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। আত্মসাৎকৃত চালের বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ২ হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভার জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক সভা না করেই সেই বরাদ্দের চাল আত্মসাৎ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন এমপি আবুল কালাম আজাদ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগসাজশে এই দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন।
বরাদ্দকৃত চাল: ৫৮২৩ টন
অর্থমূল্য: প্রায় ২২ কোটি টাকা
আসামি: ২৫ জন, চার্জশিটভুক্ত: ১৫ জন
বাদ: ১০ জন
মামলা দায়ের: ২৬ আগস্ট ২০২১
চার্জশিট: ২০২৫ সালে দাখিল
এই ঘটনায় ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট দুদকের রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়। পাঁচ বছর তদন্ত শেষে দুদক রংপুর অঞ্চলের কমিশনার (তদন্ত) মো. আলী আকবর আজিজ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। তদন্তে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দিয়ে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
চার্জশিটভুক্ত অভিযুক্তরা হলেন সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল, দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ, চাল ব্যবসায়ী ফয়জুল ইসলাম, তালুককানুপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, নাকাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান, ফুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মোল্লা, গুমানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ জগলুল রশিদ রিপন, কামারদহ ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রতন, শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মণ্ডল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আকতারা বেগম রুপা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল আহাদ, গোলাপবাগ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও কামদিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার বর্মন।
অপরদিকে মামলার এজাহারভুক্ত ১০ জনকে তদন্তে অভিযুক্ত না পাওয়ায় তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন, উপজেলার তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলাম, কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী বাবলু, কাটাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, শাখাহার ইউপি চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম, রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল রতিফ সরকার, রাখালবুরুজ ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন, কোচাশহর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, শালমারা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামিম, পৌরসভার মহিলা কমিশনার গোলাপি বেগম ও মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান।
এত বড় পরিসরে সরকারি ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে এই আত্মসাৎকে অনেকে ‘পবিত্রতা নষ্টের’ শামিল বলেও উল্লেখ করছেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।