১০০ আসনে প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত, ৩০০ আসনের লড়াইয়ে নামছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে প্রায় ১০০টি আসনে প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত। বাকি ২০০ আসনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। দলীয় জরিপে উঠে এসেছে তথ্য।

বিএনপির হাইকমান্ড নির্দেশে সারাদেশে একাধিক জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই শুরু হয়েছে। প্রতিটি আসনে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক রাখা হচ্ছে, যাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত করা হবে। ইতোমধ্যেই সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে তথ্য সংগ্রহ ও এলাকা ভিত্তিক বিশ্লেষণ চলছে।

হাইকমান্ডের পরিকল্পনায় এবার ত্যাগী, ক্লিন ইমেজধারী ও সুশিক্ষিত নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ১০০ আসনে তরুণ নেতাদের সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে এক বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য হয়। এর পরপরই সারা দেশে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে গণসংযোগ শুরু করেন।

দলীয় মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণে নানা কৌশলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। লন্ডন থেকে তারেক রহমান নিজে ফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন, মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই করছেন এবং অনেককে সরাসরি নির্দেশনাও দিচ্ছেন।

মনোনয়নে হাইকমান্ডের কঠোর শর্ত

বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এবারের মনোনয়নের জন্য কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
১. যেসব নেতারা বিগত ১৫ বছরে রাজপথে আন্দোলন ও সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন, তাদের অগ্রাধিকার।
২. প্রার্থীর সুশিক্ষা, জনপ্রিয়তা এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিচয় থাকতে হবে।
৩. সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কেউ মনোনয়ন পাবেন না।
৪. ত্যাগী নেতাদের পাশাপাশি তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
৫. মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই হাজার। এবারও জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে প্রতি আসনে ৩ থেকে ৫ জন পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন।

বিশেষ করে ২০১৮ সালে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন কিংবা ফরম কিনেছিলেন, তাদের অনেকেই এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। অনেকে এটিকে তারেক রহমানের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ হিসেবে দেখছেন এবং এলাকার জনগণকে তা জানাচ্ছেন।

জোটের আসন সমঝোতা হবে পরে

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও পরে সমমনা রাজনৈতিক জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। আর যদি সমঝোতা না হয়, তবে বিএনপি ৩০০ আসনেই এককভাবে নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছে।

আমীর খসরু: “বিএনপি পুরো প্রস্তুত”

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, “দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দেশের প্রতিটি আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জনগণের মধ্যেও ভোট নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এবার ত্যাগী ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।”

বিএনপির নির্বাচনী কৌশল ও প্রস্তুতির ধরন স্পষ্ট করছে—দলটি এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে খুবই পরিকল্পিত, সংগঠিত ও তৎপর। দলের অভ্যন্তরে পরিবর্তনের ইঙ্গিত ও তরুণ নেতৃত্বে ভরসার দিকটিও নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে পারে।