আধিপত্যের দ্বন্দ্বে রক্ত ঝরছে বাঘা-চারঘাটে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলা বিএনপিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক হামলা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে দলীয় নেতাকর্মীরা। উভয় পক্ষই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের অনুসারী হওয়ায় তৃণমূলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। এমনকি তার উপস্থিতিতেই মীমাংসা বৈঠকে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৭ জুলাই রাত পৌনে ১২টার দিকে চারঘাট উপজেলার সরদহ ট্রাফিক মোড়ে যুবদল নেতা তুষার আলী ও তার সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে চারঘাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাসান মোহাম্মদ আলীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। হাসানের শরীরে শতাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে তার ভাই জানিয়েছেন।

হামলায় হাসানের সমর্থক ছাত্রদলকর্মী সেন্টুও আহত হন। প্রথমে তাদের চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ জুলাই রাতে হাসানকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসান ও তুষারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। সমঝোতার জন্য আবু সাঈদ চাঁদের বাড়িতে বৈঠক ডাকলেও কথাকাটাকাটির পর বৈঠক ভণ্ডুল হয়ে যায় এবং রাতে হামলার ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে, ৩০ জুলাই সকালে বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের মহদিপুর হিলালপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। বিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল।

প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষক ও স্থানীয়রা অভিযোগ এনে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। ওইদিন প্রধান শিক্ষক লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষে রূপ নেয়।

আহতদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক, তার ভাই, কয়েকজন সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি বাঘা উপজেলার আড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্ধে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হন। বাঘার বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি অনোয়ার হোসেন পলাশ ও বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিমের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এদের মধ্যে রোজাউল করিম রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদ এবং অনোয়ার হোসেন পলাশ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের উজ্জ্বলের অনুসারী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির একজন সদস্য বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি, দখল ও আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অসংখ্য রক্তক্ষয়ি সংঘাত ঘটেছে। যারা নিজের মধ্যে এই সংঘাতে জড়িত তারা সবাই একজন নেতার অনুসারি। ফলে তিনি কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না। ফলে দিন দিন বাড়ছে নিজেদের মধ্যে হানাহানি।

বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাঘা-চারঘাটে বিএনপির মধ্যে যা ঘটছে তা কাম্য নয়। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এর প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে।

বাঘার আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি নুজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি বড় দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে। কিন্তু সেটি সংঘাতে পরিনত হলে তা দলের জন্য ক্ষতিকর। তবে নিজেদের সার্থ হাসিলের জন্য উভয়পক্ষকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে কি না এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি দলের হাই কমান্ডকে দেখতে হবে।