চুরি-ডাকাতিতে অশান্ত তারাগঞ্জ! রোববার প্রশাসনের জরুরি বৈঠক
তারাগঞ্জে চুরি-ডাকাতি ও খুনে জনমনে চরম আতঙ্ক, রোববার প্রশাসনের বিশেষ বৈঠক
তারাগঞ্জ, রংপুর থেকে আব্দুল্লাহিল মতিন (শাহীন):
রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলাজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক চুরি, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত দেড় মাসে বিভিন্ন ইউনিয়নে সংঘটিত একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গত ২৮ জুলাই রাতে। উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র বাবুকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে পুকুরপাড়ে ফেলে রাখা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ২৭ জুলাই কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ী সেনপাড়ায় সাবেক ইউপি সদস্যের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।
এর আগে, ২৫ জুলাই সয়ার ইউনিয়নের বড় দোলাপাড়ায় গোলাম মোস্তফার বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাতি হয়।
অপরদিকে, ৮ জুলাই কুর্শা ইউনিয়নের ঝাকুয়াপাড়া থেকে কৃষক মেনারুল ইসলামের গোয়ালঘর থেকে ৬টি গরু চুরি হয়। ২৯ জুলাই একই ইউনিয়নের গোমস্তাপাড়ায় পাশাপাশি তিনটি বাড়ি থেকে আরও ৪টি গরু চুরি হয়। একইভাবে, ৫ জুলাই রাতে ইকরচালী ইউনিয়নের দোহাজারী কওলাপাড়া গ্রামে সবুজ মিয়ার ২টি গরু চুরি হয়।
সবচেয়ে বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটে প্রামাণিকপাড়া গ্রামে। রাসায়নিক সার ব্যবসায়ী সাকলাইন প্রামাণিক ও তার পরিবারকে বেঁধে রেখে ২৫ লাখ টাকা ও ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। এছাড়া ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজে সংঘটিত ডাকাতিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪১ লাখ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকরামুল হক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই এই ধরণের অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। তারা বলছেন, অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে, তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ ফারুক জানান, উপজেলার সব সড়কে ইতোমধ্যে ১৫টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি, গত এক সপ্তাহ ধরে থানা পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পের যৌথ টহলও জোরদার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম নিজেই এলাকায় টহল কার্যক্রমে অংশ নেন।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান অপরাধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন এক বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করেছে। আগামী রোববার (৪ আগস্ট ২০২৫) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানার নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, গ্রাম পুলিশ, ব্যবসায়ী ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
জনসাধারণের প্রত্যাশা, এই বৈঠক থেকে দ্রুত এবং কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে যা তারাগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে।