হাসিনার পতনের এক বছরেও মানবাধিকার সংকটে বাংলাদেশ: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

টুইট ডেস্ক: হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পরও বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ৩০ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংগঠনটি জানায়, শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দমন-পীড়ন কিছুটা কমালেও কাঠামোগত সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার আমলে ব্যাপক গুম ও ভয়ভীতির সংস্কৃতি কিছুটা হ্রাস পেলেও নতুন সরকার এখনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও অন্যায় আটকের পথে হাঁটছে। মানবাধিকার সংক্রান্ত কোনো মৌলিক সংস্কার এখনো দৃশ্যমান নয়।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “যারা গত বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন, তাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ। ইউনূস সরকারের সংস্কার কার্যক্রম এখন সহিংস চরমপন্থা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও অকার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁদে পড়ে গেছে।”

গ্রেপ্তার, মামলা ও সহিংসতা

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের গণবিক্ষোভে জাতিসংঘের হিসাবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১,৪০০ জন নিহত হন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের (৫ আগস্ট) পর ৮ আগস্ট ইউনূস সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু ওই সরকারের আমলেই “অপারেশন ডেভিল হান্ট” অভিযানে ৮,৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আটক বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৯২ হাজারের বেশি মামলা হয়, যার বেশির ভাগই হত্যার অভিযোগে। ১,১৭০ মামলায় আওয়ামী লীগের শত শত সাবেক নেতা ও মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করা হয়, আবার বহু আসামির নাম উল্লেখই করা হয়নি।

উত্তর ঢাকার সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অনেক রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দেওয়া হলেও সেসব মামলার অধিকাংশ ঘটনার সময় তারা দেশে ছিলেন না। তাদের অনেকের এখনো অভিযোগপত্র দাখিল হয়নি, জামিন বা চিকিৎসার সুযোগও মিলছে না।

ধর্মীয় সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন

ধর্মীয় উগ্রবাদ বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। রংপুরের এক হিন্দু পল্লীতে ১৪টি ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। নারী ও এলজিবিটিকিউ জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়েও চরমপন্থীরা সক্রিয়।

গুম, র‍্যাব ও নিরাপত্তা সংস্কার

২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সরকার গুম সংক্রান্ত তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে, যার কাছে ১,৮০০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। কমিশন জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তদন্তে বাধা দিচ্ছে, প্রমাণ নষ্ট করছে এবং অভিযুক্তরা অনেকেই এখনো বাহিনীতে কর্মরত। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় অভিযুক্ত কুখ্যাত র‍্যাবকে বিলুপ্ত করার আহ্বানও জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের উচিত সংস্কার প্রচেষ্টায় ইউনূস সরকারকে সহায়তা করা। তবে একইসঙ্গে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘টার্গেটেড স্যাংশন’ ও আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু করাও জরুরি।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “ইউনূস সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু এটি সংস্কারের সময়। অতীতের নিপীড়ন যেন আর না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংস্কারে সহযোগিতা করতে হবে।”