রাজশাহীর দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ এসএম মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, পক্ষপাতিত্ব ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি, টাকা ছাড়া তারা কোনো অভিযোগ আমলে নেন না এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি পক্ষের হয়ে কাজ করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইনচার্জ মাকসুদুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় বরন সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বরনের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ সময় অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বও তাকেই দেওয়া হয়।
একটি ফোনালাপের রেকর্ড পাওয়া গেছে যেখানে বরনের মোবাইল ফোন থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য একজন সাধারণ নাগরিককে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও গোগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, “এসআই বরন সরকার মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন। রাতে তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন। এ বিষয়ে থানার ওসিকেও জানিয়েছি। তিনিও স্বীকার করেছেন, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
গত বুধবার কৃষ্ণবাড়ি গ্রামে নারীদের ঝগড়ার একটি ঘটনায় বরন সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার প্রতিবাদে স্থানীয়দের তোপের মুখে তাকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়।
বড়গাছি গ্রামের বাসিন্দা আজিবুল হাসান বলেন, “ইউপি সদস্য উকিল আলীর ভাই আমাকে মারধর করলে আমি তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করি। তদন্তের দায়িত্ব বরন সরকার পান। আমাকে ডেকে এনে উকিল আলীকে ফোন দেন বরন, আর সেখান থেকেই আমাকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন উকিল। রেকর্ড আমার কাছে আছে।”
ভুক্তভোগী তৈয়বুর রহমান বলেন, “জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আমরা যখন তদন্ত কেন্দ্রে যাই, বরন সরকার ইনচার্জের কানে কিছু বলার পর তারা আমাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। মনে হয়েছে যেন সম্পত্তির কাগজপত্রের কোনো মূল্য নেই।”
হরিশংকরপুর গ্রামের গোলাম হাসান নামে এক ব্যক্তি পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি জানান, “নিজের জমিতে গাছ লাগানো নিয়ে আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমাকে ডেকে এনে উল্টো ভয়ভীতি ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বরন সরকার। বলেন, জমিতে গেলে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেব। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কেন্দ্রের দুই কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে উঠাবসা করেন, আর টাকার বিনিময়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির নামে পক্ষপাতিত্ব করেন।
এসআই বরন সরকার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি কাউকে গালাগালি করি না। আমার ফোন থেকে কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।” তবে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পুলিশ পরিদর্শক এসএম মাকসুদুর রহমান অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বলেন, “লিখিত অভিযোগটি এখনও দেখা হয়নি। তবে অভিযোগগুলো সত্য হলে তা অত্যন্ত গুরুতর। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের ফোন থেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্যি হলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রসঙ্গত, প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।