রেললাইন কেটে মানুষ হত্যা করছে বিএনপি: শেখ হাসিনা

টুইট ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি মৃত্যুর ফাঁদ পেতে মানুষ হত্যা করছে।

রোববার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, আজ হরতাল অবরোধ ডেকে মানুষকে পুড়িয়ে মারে। রেললাইন কাটা, সরাসরি মানুষ হত্যা করা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কেন মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে পারবে না? কেন তাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে? আমার মনে হয় দেশের মানুষকে এই প্রশ্ন বিএনপির কাছে করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, রেললাইন কেটে মৃত্যুর ফাঁদ পেতে তারা মানুষ হত্যা করেছে। জিয়া আর খালেদা জিয়ার মতো লন্ডনে বসে হুকুম দেয়। আমি বুঝি না বিএনপি নেতারা কী করছে। ওখান থেকে হুকুম দেয় আর এখান থেকে আগুন দেয়। এই আগুন নিয়ে খেলা, এই খেলা ভালো না-বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।

রেললাইন কাটা এবং অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা হরতাল ডেকে ঘরে চুপ করে থাকে। এত টাকার উৎস কোথায়? হাওয়া ভবন খুলে অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং করে টাকা পাচার করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন তারা (বিএনপি) করবে কীভাবে। একটা নমিনেশন দেয় লন্ডন থেকে, একটা আসে পল্টন থেকে, আরেকটা আসে গুলশান থেকে। এখন যখন লন্ডনেরটা আসে তখন পল্টনেরটা চলে যায়। যখন পল্টনেরটা আসে তখন গুলশানেরটা যায়। সকালে একটা দেয় তো বিকালে আরেকটা দেয়।

তিনি আরও বলেন, এভাবে তাদের নির্বাচন গেল, পল্টনও গেল, লন্ডনও গেল, গুলশানও গেল। তাও কয়েকটি আসন পেয়েছিলো। সংসদে তাদের যে সদস্য ছিল, আমরা কিন্তু তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিতাম। কারণ আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম আমাদের কথা বলতে দিত না। এমনকি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয় নিয়ে একবারও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিরোধী দলীয় নেতা হয়েও আমি কখনও কথা বলার সুযোগ পেতাম না। যে কারণে আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করি।

নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা রেললাইন কাটতে যাবে এদের ধরিয়ে দিন। এদের ধ্বংসাত্মক কাজ চলতে পারে না। খালেদা জিয়ার তো বছরের পর বছর অবরোধ চলছে। ওটা এখনও তোলে নাই। বাংলাদেশ যখন কোভিড আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হরতাল অবেরোধ ডেকে আবারও বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এরা মানুষের কল্যাণ চায় না। তারা ভোটে যায় না কারণ মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এজন্য নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

জনগণের কল্যাণ, মঙ্গলের কথা বিএনপি কখনও চিন্তা করে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি এদের চরিত্র কখনও বদলাবে না।

তিনি বলেন, জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে জনরোষের আন্দোলনে ৯৬তে ভোট চুরির অপবাদ নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যের।

বিএনপি মানুষের নয়, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নাম নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে মানুষকে পুড়িয়ে মেরে আন্দোলন করে তারা। বাসে, গাড়িতে, ট্রেনে, লঞ্চে সব জায়গায় তাদের আগুন। তাদের এই অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার আজকে কত মানুষ পোড়া শরীর নিয়ে কাতর, অসহায় জীবনযাপন করে। নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল, পারেনি। জনগণ সাথে না থাকলে পারা যায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলো। সেই সময়ে ওই নির্বাচন কিন্তু কেউ মেনে নেয়নি। জনগণের আন্দোলনের কারণে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। ভোট চুরি অপবাদ মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া বিদায় নেয়।

ভোট কারচুপি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে খুব অবাক লাগে বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, ভোট কারচুপি করা, সিল মারা, হ্যাঁ না ভোট দিয়ে হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরা, এগুলো কে করেছে? এগুলো তো জিয়াউর রহমানই শুরু করেছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধ ক্ষমতা দখল করে এসবের শুরু করেছে। ওদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে। ওদেরকে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করবে কীভাবে?

বিএনপি মানুষের নয়, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এদের চরিত্র কখনও বদলাবে না। জনগণের কল্যাণ মঙ্গলের কথা এরা চিন্তা করে না। নিজেদের কথাটা ভালো বোঝে। যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট চুরি করা, অর্থ সম্পদ বানানো, বিদেশে অর্থ পাচার করা, মানিলন্ডারি করা, এমনকি এতিমের অর্থ পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। আর তাদের কাছ থেকে বড় বড় কথা শুনতে হয়। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য।”

আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে উৎখাত করা সহজ নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি মানুষের সংগঠন। এর শেকড় অনেক গভীরে। এভাবে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারবে না। সংগ্রাম করে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন সংস্কার আমরা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। অগ্নিসন্ত্রাস আর খুন করে জনগণের মন পাওয়া যায় না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে এবং আওয়ামী লীগের ওপর যত আঘাত আসুক; আওয়ামী লীগই জনগণের হয়ে লড়াই করে।