প্রথম দ্বীপমালার কারণে সুনামি থেকে তুলনামূলক নিরাপদ চীন

টুইট ডেস্ক: চীনের মূল ভূখণ্ড (Mainland China) প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে পুরোপুরি মুক্ত না হলেও, সুনামির মতো বিধ্বংসী জলোচ্ছ্বাস থেকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন — “প্রথম দ্বীপমালা” বা First Island Chain নামক ভৌগোলিক গঠনকে, যা চীনের পূর্ব উপকূলকে প্রশান্ত মহাসাগরের সুনামি-সৃষ্ট তরঙ্গ থেকে আংশিকভাবে রক্ষা করে।

কী এই প্রথম দ্বীপমালা?

“প্রথম দ্বীপমালা” বলতে বোঝানো হয় একটি স্বাভাবিক দ্বীপগুচ্ছ শৃঙ্খল, যা জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও বোর্নিও দ্বীপের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। এই দ্বীপগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান এমনভাবে স্থিত, যা চীনের উপকূলীয় এলাকাকে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর থেকে আসা বড় সুনামি তরঙ্গের সরাসরি ধাক্কা থেকে রক্ষা করে।

কিভাবে কাজ করে এই প্রাকৃতিক ঢাল?

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে যখন ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে, তখন সেখান থেকে বিশাল ঢেউ বা সুনামি সৃষ্টি হয়। এই ঢেউগুলো যখন পূর্ব দিকে ধাবিত হয়, তখন প্রথমেই তা ঠেকে যায় এই দ্বীপমালার গায়ে। দ্বীপগুলো সুনামি তরঙ্গের শক্তি শোষণ বা ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করে। ফলে চীনের উপকূলে এসে এই ঢেউয়ের গতি ও উচ্চতা অনেকাংশে কমে যায়।

তবে কি চীন সম্পূর্ণ নিরাপদ?

না, চীনের উপকূলীয় শহরগুলো যেমন — শাংহাই, গুয়াংজু, ঝেজিয়াং বা হাইনান — সম্পূর্ণরূপে সুনামির ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ, যদি পূর্ব চীন সাগর বা দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে কোনো ভূমিকম্প ঘটে, তবে খুব কম সময়ের মধ্যে তা স্থানীয়ভাবে বড় সুনামি তৈরি করতে পারে এবং চীনের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এমনকি সুনামির তরঙ্গ কখনও দ্বীপমালার ফাঁক গলিয়েও এগিয়ে আসতে পারে।

ইতিহাসে চীনে সুনামির প্রভাব:

চীনে অতীতে বড় ধরনের সুনামির ঘটনা খুব কমই ঘটেছে, তবে ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের সুনামির ঢেউ চীনের হাইনান উপকূলে কিছুটা আঘাত হেনেছিল। যদিও তাতে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের দুর্যোগের প্রস্তুতি রাখতে সবসময় সতর্ক থাকতে বলেন।

সুনামির মত ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে চীনের মূল ভূখণ্ড “প্রথম দ্বীপমালা” দ্বারা কিছুটা প্রাকৃতিক সুরক্ষা পেলেও, উপকূলীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক সুনামি সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

তাই আধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থা, দ্রুত পূর্বাভাস প্রযুক্তি ও উপকূলীয় নিরাপত্তা কাঠামো জোরদার করাই হবে নিরাপদ চীনের ভবিষ্যৎ।