রাজশাহীতে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের দুদফা সংঘর্ষ, আহত ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারায় দুই প্রার্থীর পাল্টা পাল্টি হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এ সময় বাগমারা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে উপজেলার গাঙ্গাপাড়া ও সন্ধ্যায় ভবনীগঞ্জ গোডাউন মোড়ে এ দুইটি ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনবারের এমপি এনুমল হকের সমর্থকদের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মাহাবুর রহমান (৪২) নামের নৌকা প্রতীকের একটি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবকে হাতুড়িপেটা করার ঘটনা ঘটেছে। আহত মাহাবুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার দুপুরে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গাঙ্গোপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের অনুসারী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মুখোশধারীরা ওই হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন আহত মাহবুর রহমান। তবে আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

হামলার শিকার মাহাবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের অনুসারী এবং যাত্রাগাছি ভোটকেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব। তিনি মাড়িয়া ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি। তার বাড়ি তেলিপুকুর এলাকায়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দুপুরে গাঙ্গোপাড়া মোড়ে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন মাহাবুর রহমান। এ সময় চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন মুখোশধারী যুবক সেখানে আসেন। তারা মাহাবুরকে চায়ের দোকান থেকে ধরে সড়কের ওপর নিয়ে যান এবং কেন তিনি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন কৈফিয়ত চান। একপর্যায়ে তাকে সড়কের ওপর ফেলে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে তারা পালিয়ে যান। পরে আহত মাহাবুরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আহত মাহাবুর রহমান বলেন, নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের সমর্থক আর্ট বাবুর নেতৃত্বে তাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করা হয়েছে। তারা মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তবে হামলায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কৃষক লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমি সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে আলোর পথে এসেছি। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এই হামলার মাধ্যমে একটা গেম খেলা হচ্ছে।’

এদিকে, রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের উপরে হামলা চালিয়েছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় তারা ছয়জনকে মারধার করে। প্রদর্শণ করা হয় আগ্নিয়াস্ত্রসহ লাঠি-সোটা। গাঙ্গপাড়ায় নৌকার প্রার্থীর কর্মীকে হাতুড়ি পিটার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে মোতায়েন করা হয় পুলিশ।

আহতরা হলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবি, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মাহাবুর রহমান, আওয়ামী লীগ কর্মী মাজেদুর রহমান ও মাসুদ রানা রিগেট। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, নৌকা ছাড়া কোন কথা হবে না; এমন হুমকি দিয়ে নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমাদের উপরে হামলা চালায়। এ সময় পৌরসভার কাউন্সিলর এরশাদ আলীর পিস্তল বের করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবির মাথায় ধরে। প্রতিবাদ করতে গেলে অন্যদেরকে পিটিয়ে জখম করে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবি বলেন, কালামের ক্যাডার বাহিনী তাহেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর এরশাদ আলীর নেতৃত্বে পিস্তলসহ আমাকেে এবং আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে জখম করে।

বেবি আরো বলেন, কালামের ক্যাডার বাহিনী আমার মাথায় পিস্তল ধরে হত্যার হুমকি দিয়ে গেছে। সেই সাথে আরো কয়েক জনের মাথায় পিস্তল ধরে হত্যার হুমকি দেয়। আমরা এর বিচার চায়।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের উপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী আবুল কামাল আজাদ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন প্রতিনিয়ত তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। একের পর এক হামলা করে তার সমর্থকদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। তিনি হামলা ও হুমকি-ধমকি দেওয়া ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।

এ দুইটি ঘটনার বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি বা সংসদ সদস্য বিষয়টি জানেন না। তিনি ফেসবুকে হামলার ভিডিও দেখে গাঙ্গপাড়ার ঘটনাটি জেনেছেন ।

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় তাদের কোনো যোগসূত্র নেই। তারা ভোটের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তবে ওই ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় তাদের লোকজনের উপর হামলা করেছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মাথায় পিস্তল ধরেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানায় এবং দোষিদের শাস্তির দাবি জানায়  ।

এদিকে গত (১৪ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগমারায় কৃষকলীগ এক নেতাকে পিটিয়ে জখম করেছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা। গুরত্বর জখম অবস্থায় উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের রুহিয়া গ্রামের আহত সাহেব আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আহত সাহেব আলী গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি। তার বাড়ি দেওপাড়া গ্রামে। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনবারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের কর্মী হিসেবে নির্বাচনে কাজ করছেন। সাহেব আলী জানায়, ৫/৬টি মোটর সাইকেলে যোগে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ১০/১২ জন সমর্থক এসে আমাদের উপর হামলা চালায়।

এদিকে এই ঘটনার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ সভা ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ ।

বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার বলেন, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে উভয়পক্ষকে সরিরে দেয়। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।

ওসি বলেন, ‘দুইটি ঘটনায় এখনো কোন পক্ষ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদ সদস্য এনামুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার স্থলে এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে তারা দুজন ছাড়াও জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামাণিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সাইফুল ইসলাম ও রাজশাহী জেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বাবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।