রাজশাহীতে ৫ আগস্টের আগেই ১০ চার্জশিট
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলন ও হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট ১০টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। আগামী ৫ আগস্টের আগেই এসব অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুয়িয়ান।
তিনি জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের ঘটনায় রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় মোট ২৮টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি মামলার সত্যতা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকলেও বাকিগুলোয় যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কমিশনার বলেন, যেসব মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে, সেগুলোর মধ্যে দুটি হত্যা মামলা এবং আটটি ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলা রয়েছে। অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। জুলাইয়ে না পারলেও ৫ আগস্টের আগেই এসব মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত এখনও চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, সেগুলো সম্পন্ন করে অভিযোগপত্র দিতে আরও এক-দুই মাস সময় লাগবে।
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা রায়হান আলী হত্যা মামলাটি দায়ের করেন তার ছোট ভাই রানা ইসলাম। ঘটনার ১৪ দিন পর গত বছরের ১৯ আগস্ট বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন তিনি। একই দিনের ঘটনায় নিহত হন রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ছাত্র সাকিব আনজুম। তার বাবা মাইনুল হক গত বছরের ২৪ আগস্ট সাকিব হত্যার ঘটনায় মামলা করেন।
রায়হান হত্যা মামলা
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা রায়হান আলী হত্যার মামলাটি দায়ের করেন তার ছোট ভাই রানা ইসলাম। গত বছরের ১৯ আগস্ট রাতে দায়ের করা এ মামলায় সরকারিভাবে কার্যাক্রম স্থগিত হওয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ায় সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ এক হাজার ২৫০ জন আসামি রয়েছেন। মামলায় খায়রুজ্জামান লিটনসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
নিহত রায়হান আলী (২৭) পুঠিয়া উপজেলার মঙ্গলপাড়া গ্রামের মুসলেম আলীর ছেলে। রাজশাহী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করা রায়হান রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ৫ অগাস্ট বেলা সোয়া ১টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া কল্পনা হল মোড়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন রায়হান। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ অগাস্ট সন্ধ্যায় মারা যান।
সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ছাড়াও এ মামলায় আটজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শাহমুখদুম থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সুমন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজামুল আযিম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান হোসেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত হোসেন সাহু।
সাকিব হত্যা মামলা
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সাকিব আনজুম হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ ৩৪২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। গত বছরের ২৪ আগস্ট রাতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন সাকিবের পিতা মাইনুল হক। ৪২ জনের নামসহ মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ অগাস্ট রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় শাহমুখদুম কলেজের পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাকিব আনজুম। সাবেক মেয়র লিটনের ইন্ধনে আসামিরা তাকে দুই দফা গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাকিবের বাড়ি নগরীর রাণীনগর এলাকায়। রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, গোদাগাড়ী, পবা ও পুঠিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল, ফারুক হোসেন ডাবলু ও জিএম হিরা বাচ্চু, রাসিকের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ টেকন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলী, মহানগর যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফায়সাল আহমেদ রুনু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল গালিব, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিয়াম, সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ।