শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালনার অডিও ফাঁস: আন্তর্জাতিক তদন্তে গতি
আল জাজিরার গোপন তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস।
টুইট ডেস্ক: আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট (@AJIunit) সম্প্রতি এমন কিছু গোপন ফোনালাপ প্রকাশ করেছে যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনের নির্দেশনার সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ দেয়।
এক অডিও রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনাকে ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলতে শোনা যায়, “আমার নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।
আমি খোলা আদেশ দিয়েছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে গুলি চালাবে।”
হেলিকপ্টার থেকে গুলি, নিহত বিক্ষোভকারী
আরেকটি ফাঁস হওয়া রেকর্ডিং অনুযায়ী, আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়। এতে বহু শিক্ষার্থী নিহত হন এবং আহতদের চিকিৎসা দেন এমন এক চিকিৎসকও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে এসব দৃশ্যও দেখা যায় বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আবু সাইয়েদের ময়নাতদন্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ
ছাত্রনেতা আবু সাইয়েদের মৃত্যুকে ঘিরেও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অন্তত পাঁচবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাল্টানোর চেষ্টা করেন। রিপোর্ট থেকে গুলির চিহ্ন এবং অস্ত্রের উল্লেখ মুছে ফেলার চেষ্টাও হয়। আবু সাইয়েদের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাধ্য করা হয়।
আওয়ামী লীগের পাল্টা বক্তব্য
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা কখনো প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। ১৮ জুলাইয়ের ফোনালাপের সত্যতাও তারা অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তারা স্বীকার করেছে যে, যদি আবু সাইয়েদের পরিবার কোনো হুমকি বা ভীতির সম্মুখীন হয়ে থাকে, তবে তারা তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে।
তারা আরও দাবি করে, আন্দোলনের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা এবং তথ্য অবরোধ রোধে ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালে বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর এবিএম সুলতান মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংগুলো যাচাইয়ে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি চাওয়া হয়েছে এবং তদন্তে সিআইডি, বিটিআরসি সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
অন্য এক প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম জানান, এই ফোনালাপগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাক্ষ্যরূপে ব্যবহার করা হবে।
ফরেনসিক যাচাই ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক যাচাইকৃত রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে, যেখানে শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিচ্ছেন। এই অডিও ফরেনসিকভাবে পরীক্ষা করেছে ইয়ারশট (Earshot) নামক একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা নিশ্চিত করে যে, রেকর্ডিংয়ে কোনো বিকৃতি বা কৃত্রিম উপাদান নেই।
আন্দোলন ও সরকারের পতন
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন মূলত কোটা সংস্কার ও অসহযোগ আন্দোলনের সম্মিলিত রূপ। এই আন্দোলনেই সরকারের ওপর চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি হয় এবং শেখ হাসিনার সরকার পতনের মুখে পড়ে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা গোপনে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন।
সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হ্যাশট্যাগ:
#Hasina36July
ঘটনার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে #Hasina36July হ্যাশট্যাগটি ভাইরাল হয়, যা শেখ হাসিনার জবাবদিহিতা ও ফাঁস হওয়া অডিওর ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চাপের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র:Al Jazeera Investigative Unit – @AJIunit, BBC Verified Reports, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, Earshot Forensic Lab, ট্রাইব্যুনাল প্রেস ব্রিফিং (ABM Sultan Mahmud, Gazi Monowar Hossain Tamim)