সীমান্তে থাইল্যান্ড-ক্যাম্বোডিয়া যুদ্ধাবস্থা
থাইল্যান্ড-ক্যাম্বোডিয়া সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা: থাই এফ-১৬ বোমা হামলায় নিহত ১২, উত্তপ্ত সংঘর্ষে আতঙ্কে লাখো মানুষ।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার মধ্যকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভোররাতে থাই সামরিক বাহিনী তাদের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ক্যাম্বোডিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে বোমা বর্ষণ করে।
এর জবাবে ক্যাম্বোডিয়ান বাহিনী গোলাবর্ষণ চালায় থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায়। ফলে উভয় দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে চরম সামরিক উত্তেজনা, যা এরইমধ্যে প্রাণ নিয়েছে অন্তত ১২ জনের, আহত হয়েছে ৩১ জন।
থাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্তে অবস্থান নেওয়া ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মধ্যে একটি বিমান সফলভাবে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। সেনাবাহিনীর উপ-মুখপাত্র রিচা সুকসুওয়ানন বলেন, “আমরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান শক্তি ব্যবহার করেছি।”
এদিকে ক্যাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, থাইল্যান্ড কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই দুটি বোমা ফেলে একটি প্রধান সড়কে ধ্বংসাত্মক হামলা চালায়। এ ঘটনাকে তারা “সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন ও বর্বরতা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটি বড় হুমকি বলেও জানায়।
থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ক্যাম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে থাইল্যান্ডের ১১ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১ জন সেনা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু (৮ বছর বয়সী) রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ২৪ জন সাধারণ মানুষ ও ৭ জন সেনা। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক। একটি হাসপাতালেও আঘাত হেনেছে কামানের গোলা, যেটিকে থাই কর্তৃপক্ষ ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছে।
সীমান্তের অবস্থা চরম বিপজ্জনক। থাইল্যান্ডের সুরিন ও সিসাকেট প্রদেশে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীসহ হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কে বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে, তৈরি করা হয়েছে বালুর বস্তা ও গাড়ির টায়ারে সুরক্ষিত অস্থায়ী শেল্টার। কাবচিয়াং জেলায় ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার প্রশাসক।
বিগত কয়েক মাস ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। মে মাসে সীমান্তে গুলিবিনিময়ে এক ক্যাম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। এরপর থাইল্যান্ড অভিযোগ করে যে, ক্যাম্বোডিয়া সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় নতুন ল্যান্ডমাইন বসিয়েছে, যাতে দুই সপ্তাহে তাদের তিন সেনা পা হারায়। এর প্রতিবাদে থাইল্যান্ড ক্যাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে। ক্যাম্বোডিয়া অবশ্য ল্যান্ডমাইন বসানোর অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, এটি পুরনো যুদ্ধের সময়কার মাইন, যা ভুলবশত থাই সেনারা স্পর্শ করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
আসিয়ান চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। চীন জানিয়েছে, তারা এই সংঘর্ষে উত্তেজনা হ্রাসে ভূমিকা রাখতে চায়।
থাইল্যান্ডের সাময়িক প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা ফুমথাম ভেচায়াচাই সাংবাদিকদের বলেন, “এই পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর। আমাদের আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে এগোতে হবে।”
অন্যদিকে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পেইতংতার্ন শিনাওয়াত্রা ক্যাম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন, যার বিষয়বস্তু ফাঁস হয়ে গেলে থাই রাজনীতিতে ঝড় ওঠে এবং তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
দুই দেশের মধ্যে ৮১৭ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত এখনও পুরোপুরি নির্ধারিত নয়। একাধিক পয়েন্টে মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে, বিশেষত তা মোন থম মন্দিরের আশপাশের এলাকায়। ২০১১ সালেও এই এলাকা ঘিরে এক সপ্তাহব্যাপী কামান যুদ্ধ হয়েছিল।