১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে কর রিটার্ন ছাড়, ২০ লাখ টাকার ঋণে বাধ্যতামূলক রিটার্ন
বিস্তারিত প্রতিবেদন: সরকার নতুন করে আয়কর সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, যেখানে বলা হয়েছে—১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ও মেয়াদি আমানত (এফডিআর) ক্রয়ের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
এর বিপরীতে, ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এই ঘোষণা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসেছে, যা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট প্রকাশের ভিত্তিতে কার্যকর হয়েছে।
রিটার্ন জমার শর্তে পরিবর্তন
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লুবাবা সাদিয়া জানিয়েছেন—
“আগে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন ছিল না, এখন তা বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়েছে। এর বেশি হলে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।”
এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেক সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সহজ ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
সঞ্চয় স্কিমে মুনাফার হার হ্রাস
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত পাঁচটি জনপ্রিয় সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার কমানো হয়েছে, যা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।
কমানো হার:
সর্বোচ্চ হার: ১১.৮২% থেকে ১১.৯৮%
যেসব স্কিমে মুনাফা কমেছে:
১. পরিবার সঞ্চয়পত্র, ২. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র, ৫. ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব।
গত ১ জানুয়ারিতেও একবার হার সমন্বয় করা হয়েছিল, তখন সর্বোচ্চ মুনাফার হার ছিল ১২.২৫% থেকে ১২.৫৫%।
কিছু স্কিমে মুনাফা অপরিবর্তিত
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতাভুক্ত নিচের চারটি বন্ড ও সঞ্চয় প্রকল্পে মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে-
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব।
ধাপভিত্তিক বিনিয়োগকারীর শ্রেণিবিন্যাস, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের দুইটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে ।
প্রথম ধাপ: ৭.৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগকারীরা।
দ্বিতীয় ধাপ: ৭.৫ লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগকারীরা।
এই পদক্ষেপগুলো সরকারের রাজস্ব আহরণ ও বিনিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হলেও, সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার হ্রাস বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা নৈরাশ্য ও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কর রিটার্নের শর্ত শিথিল করায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পাবে।
প্রসঙ্গত, সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের একটি নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তগুলো আগামীদিনে বিনিয়োগ প্রবণতায় কী প্রভাব ফেলে, তা সময়ই বলে দেবে।