ভারতীয় এলসিএ নেভি: প্রশিক্ষণ ও উপকূল সুরক্ষায় নতুন ভরসা

এলসিএ নেভি: ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এক আধুনিক প্রশিক্ষণ ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষা সমাধান

বিশ্ব ডেস্ক: ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-এর তত্ত্বাবধানে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (HAL) ও অ্যারোনটিকাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA)-এর যৌথ উন্নয়নে নির্মিত হয়েছে LCA Navy বা লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট নেভি।

এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রথম দেশীয়ভাবে তৈরি ক্যারিয়ার-উপযোগী যুদ্ধবিমান, যা প্রশিক্ষণ, উপকূলীয় প্রতিরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ মান্ড-আনম্যানড টিমিং (MUM-T) প্রশিক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নেপথ্য ইতিহাস: এলসিএ নেভি

এলসিএ নেভি প্রকল্পটি মূলত LCA তেজসের নৌবাহিনী সংস্করণ। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মজবুত ল্যান্ডিং গিয়ার, STOBAR ক্যারিয়ারে (Short Take-Off But Arrested Recovery) ল্যান্ডিংয়ের জন্য অ্যারেস্টর হুক এবং অতিরিক্ত কাঠামোগত শক্তি। এটি ভারতের INS বিক্রমাদিত্য ও INS বিক্রান্ত ক্যারিয়ার থেকে চালানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।

২০২০ সালে এলসিএ নেভি সফলভাবে INS বিক্রমাদিত্য-তে অ্যারেস্টেড ল্যান্ডিং ও টেক-অফ সম্পন্ন করে, যা এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা ও কাঠামোগত সক্ষমতা প্রমাণ করে। যদিও এটি মিগ-২৯কে বা রাফালের মতো বৃহৎ ফাইটারের বিকল্প নয়, তবুও প্রশিক্ষণ ও উপকূলীয় প্রতিরক্ষায় এর সম্ভাবনা এখন স্পষ্ট।

প্রশিক্ষণ বিমানের (LIFT) ভূমিকায় এলসিএ নেভি

বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীতে ব্যবহৃত BAE Hawk অ্যাডভান্সড জেট ট্রেনার ক্যারিয়ারে চালানোর উপযোগী নয়। কিন্তু এলসিএ নেভি নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় এটি সরাসরি STOBAR অপারেশনের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হতে পারে। এতে নতুন নৌবিমানচালকদের ক্যারিয়ার টেক-অফ ও ল্যান্ডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব হবে, যা এতদিন পর্যন্ত বিদেশি সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল ছিল।

উপকূলীয় প্রতিরক্ষায় সম্ভাবনা

শুধু প্রশিক্ষণের জন্য নয়, এলসিএ নেভি হতে পারে উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এতে BrahMos-NG এর মতো অত্যাধুনিক অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে, যা উপকূলীয় ও সমুদ্রসীমা রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ।

দুই স্কোয়াড্রন গঠনের পরিকল্পনা

ভারতীয় নৌবাহিনী ৮টি এলসিএ নেভি ট্রেনার বিমান কেনার চিন্তাভাবনা করছে। এতে করে অন্তত দুইটি স্কোয়াড্রন গঠন সম্ভব হবে, যা প্রশিক্ষণ এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা দুই উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হতে পারে। এটি নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় বড় একটি ঘাটতি পূরণ করবে।

ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি

এলসিএ নেভি শুধু একটি বিকল্প নয়, বরং এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি কৌশলগত সম্পদে পরিণত হচ্ছে। Manned-Unmanned Teaming (MUM-T) প্রযুক্তির সাথে একীভূত করে ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে এই প্ল্যাটফর্ম হতে পারে অত্যন্ত কার্যকর ও বহুমুখী।