মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দুর্ঘটনা নাকি দীর্ঘদিনের অবহেলার ফল?

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ আজ শোকাহত। ২১ জুলাই দুপুর ১টা ১২ মিনিটে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান F-7BGI।

মুহূর্তেই মৃত্যু ঘটে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থীর, আহত হন আরও প্রায় ২০০ জনের বেশি।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি দীর্ঘদিনের নীতিগত ব্যর্থতা, প্রযুক্তিগত স্থবিরতা এবং প্রাধান্যবোধের বিপর্যয়ের এক নগ্ন উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

পুরনো বিমানে আস্থা কেন?

চীনে তৈরি F-7BGI বিমানটি দীর্ঘদিন ধরেই পুরনো, ঝুঁকিপূর্ণ ও সীমিত সক্ষমতাসম্পন্ন বলে বিবেচিত। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কেন এখনো এই বিমান ব্যবহার করছে, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বহুবার নিরাপত্তা ও সক্ষমতা প্রশ্নে এই বিমানের পরিবর্তে আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার পরামর্শ দিয়েছেন।

JF-17 কেন এলো না?

২০২৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সফরে গিয়ে বহুল প্রশংসিত JF-17 Thunder যুদ্ধবিমানে আগ্রহ প্রকাশ করে। পাকিস্তান ও চীনের যৌথ উদ্ভাবিত এই বিমান হালকা, আধুনিক, এবং আক্রমণের উপযোগী।

এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লে. জেনারেল এস. এম. করমুল হোসেন, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ পাকিস্তানে সফর করেন এবং ইসলামাবাদে Pakistan Air Force প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জাহির আহমদ বারাবর সিধুর সাথে বৈঠকে অংশ নেন ।

সেখানে তিনি Pakistan‑চীন যৌথ নির্মিত JF‑17 Thunder যুদ্ধবিমানে “গভীর আগ্রহ” প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রেক্ষাপটে এটি অংশ হতে পারে বলে আলোচনা হয় ।

JF‑17 Thunder, বিশেষ করে Block III সংস্করণে দৃষ্টিগোচর উন্নত বৈশিষ্ট যেমন AESA রাডার, উন্নত মিসাইল সিস্টেম ইত্যাদি রয়েছে। এই বিমান ১৫–২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দামে থাকে, যা বাংলাদেশের বাজেট ও সক্ষমতার জন্য উপযোগী মনে করা হয় ।

ভারতের সরকারি স্তর থেকেও এই সম্ভাব্য চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্য রাখা হয়; ভারত মনে করে এটি শুধু সামরিক কেনাকাটা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য পরিবর্তনের সূচনা—যার বিরুদ্ধে তারা কূটনৈতিকভাবে আপত্তি তুলছে ।

তবে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এই সম্ভাব্য চুক্তির বিরুদ্ধে ভারত জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্য নষ্ট হবে এমন অভিযোগে ভারতের আপত্তিকে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রশ্নগুলোর উত্তর কোথায়?

১। আমরা এখনো কেন ঝুঁকিপূর্ণ বিমান উড়াই?
২। প্রতিরক্ষা নীতিতে দেশের সিদ্ধান্তই কি চূড়ান্ত, নাকি প্রতিবেশীর চাপেই থেমে যেতে হয়?
৩। শিশুদের মৃত্যুর দায় কে নেবে?

এ দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, কেবল প্রযুক্তি নয়—নীতিগত দুর্বলতাও প্রাণঘাতী হতে পারে। কেবল ‘দুঃখ প্রকাশ’ বা ‘তদন্ত কমিটি’ যথেষ্ট নয়।

শুধু শোক নয়, চাই জবাবদিহি

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, প্রতিরক্ষা কৌশল কেবল যুদ্ধের জন্য নয়, মানুষের জীবন রক্ষার জন্যও জরুরি।

আমরা পরিবর্তন চাই, প্রতিশ্রুতি নয়।

আর কোনো শিশু যেন স্কুলে গিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে না ফেরে।
আর কোনো পরিবার যেন শোক বুকে নিয়ে রাষ্ট্রের নিরবতা সহ্য না করে।

আমরা জবাব চাই। নিরাপত্তা চাই। এবং চাই এমন প্রতিরক্ষা নীতি—যা কূটনীতি নয়, মানুষকে প্রাধান্য দেবে।

সূত্র: dhakapost.com, apnews, reuters, bdnews24, jugantor, সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণ