মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে একই বংশের তিন শিশুর বিদায়

টুইট ডেস্ক : প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল উত্তরা দিয়াবাড়ির তিন শিশু—আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং ক্লাস শেষে বিকেলে ঘরে ফেরার কথা ছিল। ফিরেছে ঠিকই, তবে নিথর দেহ হয়ে।

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঝরে যায় একই পরিবারের তিন কিশোর প্রাণ। দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকার শিশুদের পাশাপাশি শুইয়ে দেওয়া হয় তাদের কবর। পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

দুই দিন আগেও যে উঠোনে তারা খেলাধুলায় মেতেছিল, সেখানেই মঙ্গলবার কান্নার রোল। বন্ধু, সহপাঠী, প্রতিবেশীরাও এ বিদায় মেনে নিতে পারছেন না।

তৃতীয় শ্রেণির বাপ্পি স্থানীয় আবু শাহিনের ছেলে, একই ক্লাসের হুমায়ের শাহিনের ভাইয়ের সন্তান এবং চতুর্থ শ্রেণির আরিয়ান তাদের চাচাতো ভাই। বয়সের কাছাকাছি হওয়ায় তারা ছিল বন্ধু, সহপাঠী ও খেলার সঙ্গী।

সোমবার সকালে স্কুল শেষে কোচিং ক্লাস করছিল তারা। বেলা দেড়টার দিকে তাদের ফেরার কথা থাকলেও দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পৌঁছায় বাড়িতে। জোহরের নামাজ শেষে ছেলেকে আনতে স্কুলে যাচ্ছিলেন শাহিন। পথে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ আর ধোঁয়া দেখে তিনি স্কুলে ছুটে যান।

শাহিন বলেন, ‘‘যখন স্কুলে গেলাম, দেখি আমার ছেলেটা আর নেই। আরিয়ান, হুমায়ের আর বাপ্পি—তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে।’’

দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল বাপ্পি ও আরিয়ানকে, তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তারা। হুমায়ের ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়।

তাদের জানাজায় অংশ নেন শত শত মানুষ। দূর থেকে ছুটে আসেন স্বজন, প্রতিবেশী, সহপাঠীরাও। শিশুরা কাঁদছিল বন্ধুদের জন্য। বাপ্পির বাবা সিদ্দিক আহমেদ কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন আর সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্বজনেরা।

ঘটনার সময় প্রাণে বেঁচে যাওয়া সহপাঠী রাইয়ান আফনান জানায়, ‘‘আমি সেদিন লাইব্রেরিতে ছিলাম। মেইন গেট পার হওয়ার সময় বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। বন্ধুরা বাঁচল না।’’

এ ঘটনায় একই এলাকায় আরও দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে, যাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন স্বজনরা। হঠাৎ এমন ভয়াবহ ঘটনায় হতবাক ও শোকস্তব্ধ তারারটেক।