শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় একাত্তরের বীরদের স্মরণ

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় একাত্তরের বীরদের স্মরণ করছে জাতি

টুইট ডেস্ক : পাকিস্তানী হায়েনার কবল থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়েছিল যারা, বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে সেইসব বীর সেনানীদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল যে বাংলাদেশ, তার ৫২তম বার্ষিকী পালন হচ্ছে শনিবার। ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের সূচনা হয়।

এরপর সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এসময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়; বিউগলে বেজে উঠে করুণ সুর।

এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পরপরই জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকরা, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় একাত্তরের বীরদের স্মরণ করছে জাতি

এরপরই মানুষের ঢল নামে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন স্মৃতিসৌধে।

এবার এমন এক সময়ে বিজয় দিবস এসেছে, যখন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ; নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধীদের বর্জনের মুখে সমমনাদের নিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

ভোটের আগে আসা বিজয় দিবসের বাণীতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”

দেশবাসীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া বাণীতে তিনি বলেন, “তাই আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’- মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।”

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় একাত্তরের বীরদের স্মরণ করছে জাতি

শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা হল বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন।

“এই অর্জনকে অর্থবহ করতে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাইকে জানতে ও জানাতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমরা পৌঁছে দেব- বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

একাত্তরে শহীদদের স্মরণ আর বিজয়ের আনন্দ উদযাপনে লাল-সবুজে সেজেছে পুরো দেশ; উদযাপনে নেওয়া হয়েছে বিস্তৃত কর্মসূচি।

এদিন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহে বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।

পরদিন রোববার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা হবে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।