রংপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বসবাসের অযোগ্য

বৃষ্টিতে চুঁইয়ে পড়ে পানি, দরজা-জানালা ভাঙা, শৌচাগার অকার্যকর

আব্দুল্লাহিল মতিন (শাহীন), তারাগঞ্জ প্রতিনিধি: ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারের মহতী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। এই প্রকল্পের আওতায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত বহু ঘর এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে অধিকাংশ ঘরেই ফাটল, চুঁইয়ে পড়া পানি, ভাঙা দরজা-জানালা ও অকার্যকর শৌচাগারের মতো সমস্যায় ভুগছেন সুবিধাভোগীরা।

উপজেলার ফরিদাবাদ, শ্যামগঞ্জ ফাসিরডাঙ্গা, কাচারীপাড়া, রহিমাপুর, ঘনিরামপুর আদর্শপাড়া, উজিয়াল, পদ্মপুকুর, ধোলাইঘাট, খিয়ারডাঙ্গা ও চিলাপাক আশ্রয়ণ এলাকাগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র।

ঘনিরামপুর আদর্শপাড়ার মল্লিকা বেগম জানান, “ঘর পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই দেয়ালে ফাটল ধরে। বৃষ্টির রাতে ঘরের ভেতরে পানির জন্য দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না।”

রহিমাপুর আশ্রয়নের বাসিন্দা ভ্যানচালক ওমর আলী বলেন, “টিনের চাল অনেকবার খুলে গেছে। কয়েকবার টিএনও অফিসে জানিয়েছি, কিন্তু কেউ এসে দেখেনি। এখনো বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে।”

তিন সন্তানসহ একটি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে বসবাসকারী আইসমত আরা বেগম বলেন, “ঘরটা ভাঙাচোরা। বাচ্চাগুলোর অসুখ লেগেই থাকে। কিন্তু যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।”

অকার্যকর শৌচাগার, বিপাকে নারীরা

প্রায় প্রতিটি ঘরে শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশই বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী। কোথাও পানির সংযোগ নেই, কোথাও ভেঙে পড়ে আছে প্যান। নারীরা পড়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতায়।

খিয়ারডাঙ্গার বাসিন্দা মাজেদা খাতুন জানান, “ল্যাট্রিন অনেক আগেই ভরে গেছে। এখন বাইরে যেতে হয়, খুব কষ্ট হয়।”

দুর্নীতির অভিযোগ ও গোডাউন বানানোর তথ্য

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃত ভূমিহীনদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক বিত্তবান ব্যক্তিকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রহিমাপুর আশ্রয়নের জাহিদুল (রোশনা) ও এরশাদ নিজের বাড়িতে থাকলেও বরাদ্দকৃত ঘরগুলো গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছেন। এভাবে বহু ঘর ব্যবহৃত হচ্ছে গুদামঘর হিসেবে।

নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও অনুপযুক্ত নকশা

অভিযোগ রয়েছে, ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ২/৩ নম্বর ইট, কম সিমেন্ট এবং দুর্বল কাঠামো। ঘর হস্তান্তরের পর আর কোনো তদারকি হয়নি বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাশেদুল ইসলাম জানান,

“আমার দায়িত্বে থাকাকালে এসব ঘর নির্মিত হয়নি, তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, “যাদের জমি থাকা সত্ত্বেও ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তাদের তালিকা তদন্ত করে দেখা হবে। যেসব ঘরে স্যানিটেশন বা কাঠামোগত সমস্যা আছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম প্রশ্নবিদ্ধ করছে গোটা প্রকল্পকে। দুর্বল নির্মাণ ও নজরদারির অভাবে সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত নিরাপদ বাসস্থানের সুযোগ থেকে।