পাকিস্তানে ভারতীয় প্রক্সি খারিজদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান: নয়জন নিহত, আটজন গ্রেপ্তার

বিশ্ব ডেস্ক: পাকিস্তানের মালাকান্দ জেলায় গত ১৬ থেকে ২০ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী একটি সমন্বিত গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এই অভিযানে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, লেভিস, কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) এবং জেলা প্রশাসন অংশ নেয়।

অভিযানের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় প্রক্সি হিসেবে পরিচিত ‘ফিতনা আল-খারিজ’ নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, যারা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খারিজদের অবস্থান ঘিরে ফেলে এবং একাধিক তীব্র গোলাগুলির মাধ্যমে তাদের মোকাবিলা করে। এতে নয়জন খারিজ নিহত এবং আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া, সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত দুটি গোপন আস্তানা ধ্বংস করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়দের সমর্থন

অভিযানটি স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। মালাকান্দের বাসিন্দারা নিরাপত্তা বাহিনীর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন এবং ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বর্তমানে এলাকায় ‘স্যানিটাইজেশন অপারেশন’ চলছে, যার মাধ্যমে অবশিষ্ট যেকোনো খারিজকে নির্মূল করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জাতির সঙ্গে একযোগে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের হুমকি সম্পূর্ণ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই অভিযানের সাফল্যের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি জারদারি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমরা একসঙ্গে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি।” প্রধানমন্ত্রী শরিফ অভিযানে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়কে ‘অনুকরণীয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই অভিযান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরিচালিত হয়। বিশেষ করে, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ২০২২ সালের নভেম্বরে তাদের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করার পর থেকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে।

পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ টিটিপি-কে ‘ফিতনা আল-খারিজ’ হিসেবে উল্লেখ করে এবং তাদের ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করে। তবে, ভারতীয় জড়িত থাকার দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং এটি ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বিতর্কিত বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

মালাকান্দ অভিযান: বিস্তারিত বিবরণ

মালাকান্দ জেলায় পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, লেভিস, কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে একটি গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের লক্ষ্য ছিল ‘ফিতনা আল-খারিজ’ নামে পরিচিত সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা, যাদের ভারতীয় প্রক্সি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

চার দিনব্যাপী এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের অবস্থান ঘিরে ফেলে এবং তীব্র গোলাগুলির পর নয়জন সন্ত্রাসীকে হত্যা এবং আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযানের সময় দুটি সন্ত্রাসী আস্তানা ধ্বংস করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় জনগণ এই অভিযানের প্রশংসা করেছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। বর্তমানে এলাকায় একটি ‘স্যানিটাইজেশন অপারেশন’ চলছে, যার মাধ্যমে অবশিষ্ট সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জাতির সঙ্গে একযোগে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের হুমকি সম্পূর্ণ নির্মূল করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই অভিযানের সাফল্যের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি জারদারি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন, এবং প্রধানমন্ত্রী শরিফ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়কে ‘অনুকরণীয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ: পাকিস্তানের দৃষ্টিকোণ

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে ভারত তাদের দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। বিশেষ করে, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং অন্যান্য গোষ্ঠীকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র’) এর মাধ্যমে অর্থায়ন ও সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এই অভিযোগকে বারবার উত্থাপন করেছে।

২০২৫ সালের ২৭ জুন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এক বিবৃতিতে ভারতকে ‘সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে অভিযুক্ত করেন। তিনি দাবি করেন যে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

এছাড়াও, ২০২০ সালে পাকিস্তান সরকার একটি ‘ডসিয়ার’ প্রকাশ করে, যেখানে ভারতের বিরুদ্ধে টিটিপি এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এই ডসিয়ারে দাবি করা হয় যে ভারত আফগানিস্তানে অবস্থিত কনস্যুলেটগুলোর মাধ্যমে এই গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করছে। তবে, এই অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং ভারত বরাবরই এই দাবিগুলোকে অস্বীকার করে আসছে।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বৃদ্ধি

২০২২ সালের নভেম্বরে টিটিপি তাদের যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করার পর থেকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী এবং বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। মালাকান্দ অভিযানের মতো গোয়েন্দা-ভিত্তিক অপারেশনগুলো এই হুমকি মোকাবিলার জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টার অংশ।

পাকিস্তানের দাবি অনুসারে, ভারতের সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিশেষ করে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই গোষ্ঠীগুলো হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

ভারতের অবস্থান

ভারত পাকিস্তানের এই অভিযোগগুলোকে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে যে পাকিস্তানের অভিযোগগুলো ‘ভিত্তিহীন’ এবং এগুলো ভারতের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’। ভারতের দাবি, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর জন্য ভারতকে দায়ী করছে।

২০২৩ সালে, কানাডায় খালিস্তানি সন্ত্রাসী হরদীপ সিং নিজ্জার এবং সুখদূল সিং ওরফে সুখা দুনেকের হত্যাকাণ্ডের পর ভারত-কানাডা সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়। পাকিস্তান এই ঘটনাগুলোকে ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের’ প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে। তবে, এই অভিযোগগুলোর স্বাধীন যাচাই সম্ভব হয়নি।

এই অভিযান পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সূত্র: ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)