পাহাড়ি রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় জেএসএস
আগাম নির্বাচনী উত্তাপে বান্দরবান: মাঠে জেএসএস, সক্রিয় বিএনপি-জামায়াত
বান্দরবান প্রতিনিধি: জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বান্দরবানে জমে উঠেছে আগাম ভোটের প্রস্তুতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও এবার মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তি জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)।
বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে তৎপরতা বাড়িয়েছে জনসংহতি সমিতি। দীর্ঘদিন নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরত থাকা এ দলটি এবার ভোটে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা কেএস মং-এর নেতৃত্বে সংগঠনটি রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির পাহাড়ি এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
পাহাড়ি রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় জেএসএস
১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যাত্রা শুরু করে জনসংহতি সমিতি। দীর্ঘদিন সশস্ত্র আন্দোলনের পর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে এলেও, চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় দলটি পুনরায় অস্ত্র তুলে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী ইউপিডিএফ ও জেএসএস (এমএন গ্রুপ)-এর সঙ্গে প্রায়ই সংঘর্ষ, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনও বহু ঘটনার পেছনে অস্ত্রধারী সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।
কেএস মংয়ের নেতৃত্বে ভোটের মাঠে জেএসএস
কেএস মং হচ্ছেন জেএসএস-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য। তিনি পাহাড়ি জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক এবং আন্দোলনমুখী ভূমিকায় সক্রিয়। ঢাকায় এক পাহাড়ি অনুষ্ঠানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেএস মং বলেন, “জনসংহতি সমিতি এবার নির্বাচন করবে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নেব এবং লড়ব।”
বিএনপি-জামায়াতেও ভোটের প্রস্তুতি
ভোটের তফসিল ঘোষণা না হলেও বান্দরবানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াত। বিএনপির নেতারা এলাকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনা চলছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি সাচিং প্রু জেরী এবং সাবেক সভাপতি মাম্যাচিং-কে ঘিরে।
মাম্যাচিং বলেন, “প্রার্থী হওয়া কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাইকে তার জন্য কাজ করতে হবে।”
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম-কে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি নেতা হতে চাই না, জনগণের সেবক হতে চাই। ইসলামি শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে, তাহলেই আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”
ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাবনা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও বান্দরবানে প্রার্থী বাছাই করছে। দলটি তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করেছে এবং বৃহত্তর জোটে অংশগ্রহণের বিষয়েও আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, জেএসএস নির্বাচনে অংশ নিলে পাহাড়ি ভোটব্যাংকে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির মতো এলাকায় তাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তবে জেএসএস, ইউপিডিএফ ও অন্যান্য পাহাড়ি সংগঠনের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব নির্বাচনী পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, মূলধারার জাতীয় দলগুলোও ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে তৎপর। বান্দরবানে এবার একটি বহুমুখী ও উত্তপ্ত নির্বাচনী প্রতিযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।