গোপালগঞ্জে তিনটি মামলায় আসামি ২৬০০, গ্রেপ্তার ১৬৭

টুইট ডেস্ক: গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত দু’দিনে করা তিনটি মামলায় ২ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। একই সময়ে অন্তত ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করার তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

তাদের মধ্যে ৪৮ জনকে শুক্রবার সদর থানায় করা একটি মামলায় প্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, তিন মামলায় এবং সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় জেলায় মোট ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪৮, মুকসুদপুর থানায় ৬৬, কাশিয়ানী থানায় ২৪, টুঙ্গিপাড়া থানায় ১৭ ও কোটালীপাড়া থানায় ১২ জন। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৫৫ জনকে জ্ঞাত ও ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, আটকদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবা। কেউ কারখানার শ্রমিক, কেউ রিকশাচালক, কেউ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ করেন। সবার স্বজনই দাবি করেছেন, তাদের স্বামী-সন্তানরা নির্দোষ। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর জেলায় কারফিউ জারি করা হলে শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের পুরুষরা রাত হলেই বাড়ি ছেড়ে আশেপাশের গ্রামে বা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

অনেকেই দিনেও বাড়িতে থাকছেন না। কিছু পরিবার জানিয়েছে, তাদের কোনো পুরুষ সদস্য এখন আর ঘরে রাত কাটান না, মহিলারা বাড়িতে থেকে সবসময় আতঙ্কে আছেন।

গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) ড. রুহুল আমিন সরকার বলেন, সন্দেহভাজন হিসেবে আটকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। অপরাধসংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হলেই কেবল তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশস্থল ও নেতাদের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ওই দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিতে চারজন নিহত হন। আহত একজন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ। নিহতরা সবাই বয়সে তরুণ।

বুধবার রাত ৮টা থেকে এই জেলা শহরে কারফিউ চলছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কারফিউ কয়েক ঘণ্টার জন্য শিথিল করা হয়। আবার কারফিউ বলবৎ হলে শহরে জনশূন্য হয়ে পড়ে। শহরের ছোট-বড় রাস্তাগুলো ছিল যানবাহনশূন্য।

আজ শনিবার (১৯ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ শিথিল থাকবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে কারফিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।