নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠল বাংলাদেশ: আওয়ামীলীগ পন্থী উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি
আওয়ামীলীগ পন্থী উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবী জোরালো
টুইট প্রতিবেদন: গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশের ছাত্র ও সাধারণ জনতার ‘ব্লকেড আন্দোলন’।
১৬ জুলাই, বুধবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কর্মসূচি “জুলাই পদযাত্রা” শেষে গোপালগঞ্জ শহর ত্যাগকালে তাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে।
এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, এই হামলায় জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার সময় ইউএনও ও পুলিশের গাড়িও লক্ষ্যবস্তু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গুলি ছোড়ে এবং গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে সেনা, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এনসিপি নেতারা পরে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রথমে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (ADSM)” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ব্লকেড কর্মসূচির ডাক দেয়। বিকেল থেকেই রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নওগাঁ, খুলনা, ঢাকা, মাদারীপুর ও সিরাজগঞ্জসহ অন্তত সাত জেলায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা বিক্ষোভে অংশ নেয়। রাজশাহীর সাহেববাজার, চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট, নওগাঁর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, খুলনার শিববাড়ি মোড় ও ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় হাজারো আন্দোলনকারী। তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ব্যানার ও স্লোগানের মাধ্যমে হামলার প্রতিবাদ জানায়।
ঢাকায় রাত ৮টায় “মশাল মিছিল”-এর ডাক দেওয়া হয়েছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই ব্লকেডের কারণে রাজশাহী–ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও রাজশাহী–পাবনা রুটে বাস ও ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। একজন রাজশাহীর দোকানদার বলেন, “জ্বালানি নিতে এসে দেখি গাড়ি চলছে না, দোকানে ফিরতে পারছি না।” অপরদিকে, এক ছাত্রনেতা বলেন, “আমরা এই রাষ্ট্রে হামলা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। যতক্ষণ না বিচার হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।”
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা রাসে খান তার ফেসবুক পোস্টে গোপালগঞ্জকে “রণক্ষেত্র” আখ্যা দিয়ে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করার দাবি জানান। তিনি লিখেছেন, “গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে আমরা সেনা হস্তক্ষেপ চাই।” তার এই আহ্বান রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকে একে সাংবিধানিক শিষ্টাচার পরিপন্থী বললেও এনসিপি সমর্থকরা এই দাবিকে তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন বলে দাবি করছেন।
সরকারি পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, “পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো হতাহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সারাদেশে প্রতিবাদ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ADSM-এর পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এনসিপি নেতারা জানিয়েছেন, “এটি শুধু আমাদের ওপর হামলা নয়, এটি গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। বিচার না হলে জনগণ রাস্তায় থেকেই জবাব দেবে।”
আওয়ামীলীগ পন্থী উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবী জোরালো
বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পন্থী উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবী ব্যাপক ভাবে জোরালো হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, বর্তমান ঘটনাবলী ও অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে এই দাবি তীব্রতা পেয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা বেড়ে যাওয়ায়, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী নীতিপন্থী উপদেষ্টাদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর বিচার প্রক্রিয়ায় যথাযথ কার্যকারিতার অভাব এবং সাধারণ মানুষের মাঝে জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতি অনীহা এই দাবীর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে, ২০২৫ সালের মে মাসে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করলেও আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি উপদেষ্টাদের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে। তবে, রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগণের মাঝে এই দাবি ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনও বিষয়টিতে স্পষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়া বা সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী সময়ে এ নিয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, গোপালগঞ্জের ঘটনা এখন আর কোনো একক জেলা কেন্দ্রিক সহিংসতা নয়—এটি জাতীয় রাজনীতির বিস্তৃত প্রতিবাদের রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখা এবং রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা। এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অতি উত্তেজনাপূর্ণ ও সংবেদনশীল; তাই দ্রুত এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।