গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্লকেড ডাক

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা

টুইট ডেস্ক: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে দেশব্যাপী ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

ফেসবুক বার্তায় রিফাত লেখেন, “গোপালগঞ্জে জুলাই নেতাদের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”

হামলার বিবরণ: লঞ্চঘাটে ভয়াবহ সংঘর্ষ

বুধবার দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে গোপালগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ শেষে মাদারীপুরে ফেরার পথে তারা হামলার শিকার হন। অভিযোগ অনুযায়ী, চোখ-মুখ বাঁধা হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে এবং গাড়িবহরে ভাঙচুর চালায়।

এনসিপির অভিযোগ—হামলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত, যারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পদযাত্রা বানচাল করতে চেয়েছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, হামলা-পরবর্তী উত্তেজনা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলেছে, যেখানে এলাকাবাসী ও সাধারণ পথচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া ও সেনা-পুলিশের তৎপরতা

ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি যৌথভাবে গোপালগঞ্জ শহরে অবস্থান নেয়। জেলায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। সরকারি দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রশাসনের দাবি, আইন অমান্য করে এনসিপি কর্মীরা সমাবেশ করছিল বলেই সংঘর্ষ বাধে।

তবে এনসিপির দাবি—“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরুতে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং পরে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেনা ও পুলিশ যৌথভাবে হস্তক্ষেপ করে।” এনসিপির শীর্ষ নেতারা পরবর্তীতে শহর ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যান।

ব্লকেড কর্মসূচি: ছাত্র রাজনীতির নতুন চ্যালেঞ্জ

গোপালগঞ্জের হামলার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ছাত্র রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, “এটা শুধু এনসিপির ওপর হামলা নয়, এটা মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর হামলা। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজই একমাত্র জবাব।”

প্রথম ধাপে ঢাকার শাহবাগ, চট্টগ্রামের জিইসি মোড়, রাজশাহীর সাহেববাজার, খুলনার গল্লামারী ও সিলেটের আম্বরখানাসহ ১৫টি প্রধান শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্লকেডের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনার নতুন মোড়

ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইতিমধ্যে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা রাসে খান সেনা হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে ফেসবুকে আলোচিত পোস্ট দিয়েছেন। অপরদিকে, সরকার বলছে—এই ধরনের কর্মসূচি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নষ্ট করতে পারে এবং তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “এখন শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক কৌশলও জরুরি হয়ে উঠেছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বিক্ষোভ ও প্রতিরোধে রূপ নিচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলছে।”

গোপালগঞ্জে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা এবং তার প্রতিবাদে ঘোষিত ব্লকেড কর্মসূচি দেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করতে যাচ্ছে। প্রশাসনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা।

দেশজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং রাজনৈতিক সহনশীলতাই পারে উত্তেজনা প্রশমিত করতে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়ে উঠেছে।