গোপালগঞ্জে সেনা-বিজিবির যৌথ অভিযান
গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে মাঠে বিজিবি, রণক্ষেত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টারত প্রশাসন
টুইট ডেস্ক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কর্মসূচি “জুলাই পদযাত্রা” ঘিরে গোপালগঞ্জে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে ও পরে শহর ত্যাগের পথে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং প্রশাসন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সমন্বয়ে যৌথভাবে মাঠে নামে।
বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে এখন প্রশাসনের তিনটি বাহিনী—সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি—মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
সংঘর্ষের শুরু: সমাবেশ থেকে শহর ছাড়ার পথে হামলা
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ চলাকালে মঞ্চে হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। ভাঙচুর করা হয় সাউন্ড সিস্টেম, চেয়ার ও মাইক। উপস্থিত এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। পুলিশ শুরুতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতা-কর্মীরা গাড়িবহরসহ শহর ত্যাগের সময় উলপুর ও গান্ধিয়াশুর এলাকায় ফের হামলার শিকার হন। এতে কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে। এনসিপির অভিযোগ—এই হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গুলি, অগ্নিসংযোগ ও পাল্টা হামলা
পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে, প্রশাসন পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিছু এলাকায় গুলি চালানো হয় এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার একপর্যায়ে এনসিপির নেতারা স্থানীয় একাধিক সরকারি স্থাপনায় অবস্থান নিতে বাধ্য হন, যাতে আরও রক্তপাত এড়ানো যায়।
গোপালগঞ্জ জেলায় এখন ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের টহল চলছে। সড়কপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
বিজিবি সদর দফতর জানিয়েছে, চার প্লাটুন সদস্য এখন মাঠে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী মোতায়েন আরও বাড়ানো হতে পারে। সেনাবাহিনী সরাসরি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সকল বাহিনী সমন্বিতভাবে সহিংসতা ঠেকাতে কাজ করছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা রাসে খান ফেসবুকে একটি পোস্টে গোপালগঞ্জকে ‘রণক্ষেত্র’ আখ্যা দিয়ে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে নেতা-কর্মীদের ‘উদ্ধার’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপর সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ এনেছেন এবং প্রশাসনের ‘নির্বিকার’ ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে, প্রশাসন দাবি করছে—১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও এনসিপি কর্মীরা ‘বিদ্রোহী মনোভাব’ নিয়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করেছে এবং সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করেছে। ফলে আইনগতভাবে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
গোপালগঞ্জ এখন কার্যত একটি নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির মধ্যে আছে। প্রশাসন চাচ্ছে রক্তপাত ও বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে সেনা, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বিত ব্যবস্থা। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রতিক্রিয়াগুলো পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।
এই মুহূর্তে রাজনৈতিক পরিমিতিবোধ, প্রশাসনিক নিষ্ঠা ও নাগরিক শান্তিপূর্ণ অবস্থানই গোপালগঞ্জকে স্থিতিশীলতার পথে ফেরাতে পারে—এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।