নিষেধাজ্ঞায় আটকা পুলিশের জন্য কেনা দুই হেলিকপ্টার
টুইট ডেস্ক : বাংলাদেশ পুলিশের জন্য কেনা দুটি হেলিকপ্টার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকে রয়েছে, এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই ঘটনা সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ২০২২ সালে দুটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই হেলিকপ্টারগুলো মূলত নজরদারি, উদ্ধার অভিযান এবং বিশেষ অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা হতো। সরকার এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে এবং একটি আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে।
তবে, হেলিকপ্টার দুটি বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফলে, হেলিকপ্টার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ইতোমধ্যে প্রদত্ত অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
নিষেধাজ্ঞার কারণ
জানা গেছে, হেলিকপ্টার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি একটি তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আর্থিক লেনদেন এবং সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এই নিষেধাজ্ঞার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, এটি ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এই প্রকল্পের জন্য সরকার ইতোমধ্যে সরবরাহকারীকে ৩০০ কোটি টাকার বড় একটি অংশ পরিশোধ করেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে হেলিকপ্টার সরবরাহ না হলে এই অর্থ ফেরত পাওয়া কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটি দেশের জনগণের ট্যাক্স থেকে সংগৃহীত অর্থ হওয়ায় এই ঘটনা সরকারি তহবিলের অপচয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
একজন অর্থনীতিবিদ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ ধরনের ঘটনা সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক চুক্তিতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল।”
সরকারের অবস্থান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার এই বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি হেলিকপ্টার সরবরাহ নিশ্চিত করতে অথবা পরিশোধিত অর্থ ফেরত আনতে। তবে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।”
জনমত ও সমালোচনা
এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে এটিকে সরকারি অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ তুলছেন। বিশেষ করে, বিরোধী দলের নেতারা এই ঘটনাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করে বিবৃতি দিয়েছেন।
একজন বিরোধী নেতা বলেন, “৩০০ কোটি টাকা জনগণের সম্পদ। এই অর্থ যদি গচ্চা যায়, তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। আমরা এই বিষয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানাচ্ছি।”
সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে দ্রুত কূটনৈতিক এবং আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে-নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরবরাহকারীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা। আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় আরও কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন।
বাংলাদেশ পুলিশের জন্য কেনা হেলিকপ্টার আটকে যাওয়া এবং ৩০০ কোটি টাকা গচ্চার আশঙ্কা দেশের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সতর্কতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে জনগণের আস্থা ফিরে আসতে পারে এবং আর্থিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে।