স্মার্ট রকেট ও ড্রোনে আধুনিক ‘কিল চেইন’ গড়ে তুলছে বাংলাদেশ

তুরস্কের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা উদ্যোগ: স্মার্ট রকেট ও ড্রোনে আধুনিক ‘কিল চেইন’ গড়ে তুলছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে ‘Forces Goal 2030’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।

তুরস্কের সাথে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও অস্ত্র ক্রয়ে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন আধুনিক ‘কিল চেইন’ বা সেন্সর-টু-শুটার সিস্টেম গড়ে তুলছে। এতে স্মার্ট রকেট, ড্রোন এবং সমন্বিত কমান্ড প্রযুক্তির সংযোজন ঘটেছে।

সম্প্রতি Defence Security Asia-তে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২০১৯ সালে তুরস্কের Roketsan প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে TRG-300 Kaplan স্মার্ট মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম কেনার জন্য চুক্তি করে।

এই রকেটগুলো ২০২১ সাল থেকে দেশে আসা শুরু করে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ১৮টি লঞ্চার, মোবাইল কমান্ড পোস্ট ও রিলোড ট্রাক ব্যবহার উপযোগী করে মোতায়েন করা হয়েছে।

এই রকেট প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে মাত্র ১০ মিটার ‘Circular Error Probable’ (CEP) সহকারে আঘাত হানতে সক্ষম। তাছাড়া, প্রতিটি রকেট প্রায় ১৯০ কেজি ওজনের উচ্চ বিস্ফোরক সাবমিউনিশন বহন করতে পারে। এর ফলে, শত্রুর লজিস্টিক হাব, এয়ার ডিফেন্স সাইট এবং কমান্ড পয়েন্টে সুনির্দিষ্ট আঘাত হানা সম্ভব হচ্ছে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ১২টি Bayraktar TB2 ড্রোন, যার মধ্যে ৬টি ইতোমধ্যে ২০২৩ সাল থেকে অপারেশনাল এবং বাকি ৬টি ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্ত হওয়ার কথা।

এই ড্রোনগুলো ISR ব্যাটালিয়ন এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, যা টেজগাঁও বিমান ঘাঁটি থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

এই ড্রোনগুলো শুধু নজরদারিতেই নয়, বরং রিয়েল টাইম তথ্য দিয়ে TRG-300 এর আঘাত নির্ভুল করতে সাহায্য করছে—এভাবে সেনাবাহিনীর আগ্রাসন-প্রতিরোধ সক্ষমতা আরও বেড়ে গেছে।

দে‌শের ডিফেন্স খাতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে ৫টি চমকপ্রদ সুখবর হ‌চ্ছে-

১. বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো পেয়েছে তুরস্কের TRG-300 Kaplan স্মার্ট রকেট সিস্টেম।
২. ১২টি Bayraktar TB2 ড্রোন এর মাধ্যমে নজরদারি ও আঘাতের আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে।
৩. ড্রোন ও রকেট একসঙ্গে কাজ করে রিয়েল টাইমে সঠিক লক্ষ্য ধ্বংসের সক্ষমতা অর্জন।
৪. তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি জোন স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।
৫. বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোয় একটি আধুনিক “Precision Strike Doctrine” গড়ে তুলছে।

এটি মূলত আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার নাগোর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের কৌশল অনুসরণ করে সেনাবাহিনীর ‘sensor-to-shooter doctrine’ বাস্তবায়নের একটি অংশ, যেখানে ড্রোন তথ্য সংগ্রহ করে এবং রকেট সিস্টেম সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি জোন স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে, যা ভবিষ্যতে দেশীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা আনতে সহায়ক হতে পারে।

তথ্যসূত্র: Defence Security Asia, ৫ জুলাই ২০২৫ – “From Kaplan Rockets to Bayraktar Drones: Bangladesh’s New Kill Chain Signals Forces Goal 2030 in Action”