দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দামি গরুর মাংস বাংলাদেশে, সিন্ডিকেট দায়ী?

টুইট ডেস্ক:বাংলাদেশে গরুর মাংসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।

আশপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম আকাশচুম্বী। অথচ উৎপাদন, সরবরাহ ও চাহিদার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে বাস্তব চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন।

দক্ষিণ এশিয়ায় গরুর মাংসের দাম তুলনামূলক চিত্র-

ভারত (কলকাতা): ₹১৭৫ প্রতি কেজি ≈ ৳২২৪
পাকিস্তান: PKR ৬০০ প্রতি কেজি ≈ ৳২৩০
নেপাল: $০.৭৬ প্রতি কেজি ≈ ৳৮০
ভুটান: ১৬০ নুল ≈ ৳২০৭
মিয়ানমার: $৫.৬৬ প্রতি কেজি ≈ ৳৫৬৭
বাংলাদেশ (ঢাকা): ৳৮০০ প্রতি কেজি

এই তুলনামূলক চিত্রে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে পেছনে ফেলে গরুর মাংসে সবচেয়ে বেশি দাম বাংলাদেশেই। এমনকি ঢাকা থেকে মাত্র ১২৭ কিলোমিটার দূরে এক জেলায়ও মাংসের দাম ৬০০ টাকা কেজি, যা রাজধানীর চেয়ে ২০০ টাকা কম।

উৎপাদন বনাম চাহিদা

বাংলাদেশে বার্ষিক গরুর মাংসের চাহিদা আনুমানিক ৭৬ লাখ টন, যেখানে উৎপাদন হয় ৯২ লাখ টন। অর্থাৎ ১৬ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকে প্রতিবছর।

এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—
রপ্তানি: প্রায় শূন্য
আমদানি: প্রায় বন্ধ
উদ্বৃত্ত মাংস: অব্যবহৃত বা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই উদ্বৃত্ত যদি রপ্তানি বা দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থায় প্রবাহিত হতো, তাহলে কেজিপ্রতি গরুর মাংসের দাম ৬৪০ টাকা বা তার কম হতো। এমনকি আমদানির অনুমতি দিলে মাংসের দাম ৫০০ টাকার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও লাভ

বাংলাদেশে প্রায় ২৫ লাখ খামারি ও পশু খাদ্য ব্যবসায়ী । খামার-সিন্ডিকেট বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর পাশাপাশি উদ্যোক্তা, ডিহ্যাভেনার, হাট-মধ্যস্বত্বাধিকার, ও ফিড/ভ্যাট ব্যবসায়ী—মোটামুটি এক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্লাটফর্ম হিসেবে দাম নির্ধারণ করছে।

সরকার দাবি করলেও দাম না কমা এবং উৎপাদন-সাপ্লাইয়ের লঙ্ঘন অনেক প্রশ্নে দাগ ফেলে।

এই অপ্রতিযোগিতামূলক অবস্থা বজায় রাখতে গিয়ে তারা দেশের ২০ কোটি মানুষকে কেজিপ্রতি গড়ে ৩০০ টাকা বেশি দামে মাংস কিনতে বাধ্য করছে।

এর অর্থ, অতিরিক্ত খরচ-

৭৬ লাখ টন × ৩০০ টাকা × ১০০০ = ২,২৮,০০০ কোটি টাকা (≈ ২০ বিলিয়ন ডলার)

খামারি-ব্যবসায়ীদের বছরে গড়ে অতিরিক্ত আয়, ২২৮০০০ কোটি / ২৫ লাখ = প্রতি খামারি বা ব্যবসায়ী বছরে গড়ে ৯,১২,০০০ টাকা

এই অঙ্কগুলো যদি সত্য হয়, তাহলে এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায়—সাধারণ জনগণের পকেট কেটে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী অতিরিক্ত মুনাফা করছে, যার জন্য দায়ী অব্যবস্থাপনা, সিন্ডিকেট এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।

বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণে সত্যিকারের বাজারনীতি কার্যকর হচ্ছে না বলেই গরুর মাংসের মতো মৌলিক পণ্যের দাম দেশের সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গরুর মাংস শুধু ধর্মীয় প্রয়োজনেই নয়, সাধারণ প্রোটিনের উৎস হিসেবেও প্রয়োজন। এই বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখতে হলে রপ্তানি নীতি, আমদানি বিকল্প ও সিন্ডিকেট বিরোধী শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।