শরিয়াতেই নারীর মুক্তি: তালেবান সরকারের দাবি

‘নারী কেবল শরিয়া আইনেই নিরাপদ ও স্বাধীন’ — আফগান সরকারের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্ক

টুইট ডেস্ক: আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দাবি করেছে, নারীরা কেবলমাত্র ইসলামি শরিয়াহ আইনের ছায়াতেই প্রকৃত অর্থে নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন যাপন করতে পারেন। দেশটির নেতৃত্ব বিশ্বাস করে, শরিয়া ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা যেমন যৌন হয়রানি, সহিংসতা ও অবমাননা থেকে রক্ষা পান, তেমনি পবিত্রতা ও মর্যাদা নিয়েও বাঁচেন।

তালেবান সরকারের ঘনিষ্ঠ এক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, “Women can only be truly safe and free under the umbrella of Sharia. “নারীরা কেবলমাত্র শরিয়াহর ছায়াতেই প্রকৃত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে।” এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছে, নারীদের স্বাধীন চলাফেরা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে তালেবান সরকার।

বিশেষ করে, কিশোরী মেয়েদের বিদ্যালয়গমন নিষিদ্ধ, নারীদের বিদেশি ও এনজিও প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ হ্রাস, ও এককভাবে বাইরে চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ ও বিশ্লেষণ

ইসলামি আইন ও সমাজবিজ্ঞানের গবেষকরা বলছেন, শরিয়া আইনকে যদি ন্যায়বিচার ও করুণা ভিত্তিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে তা নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ ড. ফারাহ জাহরা বলেন—“শরিয়াহ একাধারে ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এটি কেমনভাবে এবং কার মাধ্যমে প্রয়োগ করা হচ্ছে — সেটাই মূল প্রশ্ন।”

আফগানিস্তানে বর্তমান বাস্তবতা

তালেবান সরকারের দাবি অনুযায়ী তারা “মহিলা-মহানুভব” শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে”। তবে দেশটির অভ্যন্তরে অনেক নারী এটিকে শোষণমূলক ও দমনমূলক বলে অভিযোগ করেছেন।

জাতিসংঘের হিসাবে, তালেবান শাসনের অধীনে নারীশিক্ষা ও চাকরির হার ৭০% কমেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও স্বীকৃতিও এখন অনিশ্চিত।

তালেবান সরকার একদিকে শরিয়াহ আইনের ছায়ায় নারীর নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, অপরদিকে বাস্তবতায় নারীর অধিকার ও সুযোগ ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। এই দ্বৈত চিত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক ও আলোচনা চলছেই।