শুল্ক ও কর অফিসে অচলাবস্থা: অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে নতুন সংকট

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের অর্থনীতি যেখানে এখনও কোভিড-পরবর্তী মন্দা, বৈদেশিক ঋণের চাপে ডুবে থাকা এবং রেকর্ড মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়ছে, সেখানে শুল্ক ও কর ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ অচলাবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলেছে।

বিগত কয়েকদিন ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর দপ্তরগুলোর কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে থমকে গেছে।

এই অচলাবস্থার পেছনে রয়েছে শীর্ষ কর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলন, যা শুরু হয়েছে প্রস্তাবিত রাজস্ব কাঠামোর পরিবর্তন ও পদোন্নতি ব্যবস্থার অস্বচ্ছতা ঘিরে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বারবার উপেক্ষিত হয়েছে, এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু মৌলিক পরিবর্তন এই ক্ষোভ আরও গভীর করেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ আজ দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি। এর ফলে চট্টগ্রাম, বেনাপোল, ঢাকাসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। শুল্ক ও কর আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে।

এনবিআরে চলমান অচলাবস্থার সূচনা ১২ মে থেকে, যখন সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’—ঘোষণা করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, তাদের এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় উপেক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা নির্যাতন ও দমন-পীড়নের অভিযোগ এনেছেন।

আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি

এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ

নতুন দুটি বিভাগে রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার

আন্দোলনের মধ্যেই আলোচনা সম্ভব, তবে শর্তসাপেক্ষে

পণ্য খালাস বন্ধ: দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও বেনাপোলসহ সব স্থল ও বিমানবন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

রাজস্ব আদায় থেমে গেছে: এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় এই অচলাবস্থার কারণে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

শিল্প ও ব্যবসায় অস্থিরতা: শিল্পপতিরা বলছেন, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আটকে থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই অচলাবস্থা ভয়ানক পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। অর্থনীতিবিদ ড. জামিল আহমেদ বলেন, “যেখানে সরকার আইএমএফের ঋণের কিস্তি সময়মতো মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে রাজস্ব সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যাওয়া জাতীয় আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মতো।”

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আন্দোলনকারীদের দাবি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে এবং আলোচনা চলছে।” তবে এ পর্যন্ত কোনও কার্যকর সমাধান বা নির্ধারিত সময়সীমা জানানো হয়নি।

ব্যবসায়ী, আমদানিকারক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। ঈদ-পরবর্তী বাজারে আমদানি পণ্যের ঘাটতির কারণে মূল্য আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বাংলাদেশের জন্য এখন প্রতিটি দিন মূল্যবান, আর এই মুহূর্তে শুল্ক ও কর ব্যবস্থার অচলাবস্থা একটি চরম ঝুঁকি। দ্রুত সমাধান না হলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে।

এখন প্রয়োজন জরুরি আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকর সমাধান ও অবকাঠামোগত সংস্কারের রূপরেখা।