বুডাপেস্টে প্রাইড মার্চে রেকর্ড জমায়েত, নিষেধাজ্ঞা অমান্য
বুডাপেস্টে প্রাইড মার্চে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়
বিশ্ব ডেস্ক: হাঙ্গেরির রাজধানী বুডাপেস্টে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত প্রাইড মার্চে আজ ২৮ জুন রেকর্ড সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন।
আয়োজকদের দাবি, প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আজকের পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছে, যা হাঙ্গেরির ইতিহাসে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।
প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান সরকারের জারি করা নতুন আইন অনুযায়ী, পাবলিক প্লেসে সমকামীতা প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার অংশ হিসেবে এবারের প্রাইড মার্চকেও বেআইনি ঘোষণা করে প্রশাসন। তবে বুডাপেস্টের লিবারেল মেয়র গেরগেলি কারাচোনি ঘোষণা দেন, এটি একটি সিটি স্পন্সরড ইভেন্ট এবং আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই। তিনি পুলিশকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
আন্দোলনকারীরা পতাকা, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রীয় সড়কগুলোতে সমবেত হন। তারা সরকারের ‘অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক’ আইন বাতিলের দাবি জানান।
আইনি হুমকি ও নজরদারি
মার্চে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জরিমানা ও কারাদণ্ডের হুমকি রয়েছে। আয়োজকদের এক বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে এবং অংশগ্রহণকারীদের ৫০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হতে পারে। পুরো রুটজুড়ে বসানো হয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন ক্যামেরা, যা নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ৭০ জন এমপি এবং ৩০টিরও বেশি দূতাবাস প্রকাশ্যে এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে। প্রাইড মার্চে সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়েছেন ইউরোপীয় সমতা কমিশনার হাজা লাহবিব। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইয়েন বলেছেন, হাঙ্গেরির এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
ডানপন্থী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর পাল্টা কর্মসূচি ও সহিংসতার আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসনকে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। ইতোমধ্যে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে।
হাঙ্গেরির ইতিহাসে প্রাইড মার্চ নিয়ে এত বড় আকারে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা এবং জনতার প্রতিবাদ আগে দেখা যায়নি। আজকের এই পদযাত্রা শুধু এলজিবিটিকিউ অধিকারের লড়াই নয়, এটি হাঙ্গেরিতে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া ও হাঙ্গেরির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে আন্তর্জাতিক মহল।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, এপি, রয়টার্স, ইউরোনিউজ