‘রেললাইন কাটা হয় অক্সি-অ্যাসিটিলিন দিয়ে’

টুইট ডেস্ক : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখরিয়া গ্রামে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন কাটতে অক্সিঅ্যাসিটিলিনের ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা। অক্সিঅ্যাসিটিলিনের মাধ্যমে রেললাইন গলিয়ে দুর্বৃত্তরা এই নাশকতা করেছে। ঘটনাস্থল থেকে অক্সিঅ্যাসিটিলিন ও এলপিজি সিলিন্ডার জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। অক্সিঅ্যাসিটিলিন হলো অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের মিশ্রণ। এর মাধ্যমে প্রজ্বালিত অগ্নিশিখার তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে। লোহা বা ধাতব পদার্থ গলাতে অক্সিঅ্যাসিটিলিনের ব্যবহার করা হয়।

ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রেললাইনকে অক্সিঅ্যাসিটিলিনের মাধ্যমে গলিয়ে ফেলা হয়েছে। এই রেললাইন গলানোর জন্য ২ হাজারের বেশি তাপমাত্রা দরকার। এই ম্যাকানিজম যারা দিয়েছে, তারা পেছনে আছে। আমরা তাদের খুঁজে বের করব।’

তিনি বলেন, ‘এটি নাশকতার ঘটনা। যারা নাশকতাকারী, যারা এত বড় একটি দুর্ঘটনার প্ল্যানিং করেছে, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করা হবে। এমন পরিকল্পিত সহিংসতায় যারা জড়িত, তারা আইনের আওতায় আসলে সবার জন্য এটি একটি মেসেজ হবে।’

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। রাষ্ট্র এবং আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকব। এই নাশকতার নেতৃত্বে যারা আছে, যারা নির্দেশ দিয়েছে, কন্টাক্ট দিয়েছে, তারা কারা আপনারা জানেন। গোষ্ঠীগতভাবে তাদের অবস্থান আপনারা সকলেই জানেন। আমরা তাদের খুঁজে বের করব। এই ঘটনার মতো আর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।’

সৈয়দ নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘রেলওয়ের নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেব। গত রাতে প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের মুভমেন্ট করতে সমস্যা হয়েছিল। সেই সুযোগটা নাশকতাকারীরা নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে কুয়াশার ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন কাজ করতে পারে, রেলওয়ের যেন নিরাপত্তা দেওয়া যায়, আমরা সেই ব্যবস্থা করব।’

ভোর সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখরিয়া এলাকায় আন্তনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমোটিভসহ মোট সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে আসলাম হোসেন (৩৫) নামে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এক যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। ট্রেনটি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুরের দিকে যাচ্ছিল।

মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও ভাওয়াল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে বনখরিয়া এলাকায় রেলপথের একটি অংশ কেটে রাখে দুর্বৃত্তরা। ভাওয়াল রেলস্টেশনে পৌঁছানোর আগেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রেলপথের দুটি স্লিপারের মধ্যে পূর্ব পাশের একটি স্লিপার কাটা। স্লিপার স্থির রাখার কাজে ব্যবহৃত শক্তিশালী নাটের পাশে কাটা হয়েছে। কাটা অংশের পর প্রায় ১০০ মিটার রেললাইন দুমড়েমুচড়ে গেছে। লাইন থেকে পশ্চিমে হেলে পড়া একটি বগির সঙ্গে অন্য একটি বগি প্রায় ১৫ ফুট গভীরে ঝুলে আছে।

বেলা দুইটায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের দুই পাশে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন বিরামহীন কাজ করছে। উদ্ধারকর্মীরা দুটি উচ্চশক্তিসম্পন্ন এক্সকাভেটর ক্রেন দিয়ে লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। উদ্ধারকর্মীরা যন্ত্রের সাহায্যে বগিগুলো একটি থেকে আরেকটিতে আলাদা করছেন। দুর্ঘটনার পর আট ঘণ্টার চেষ্টায় রেললাইন থেকে দুটি বগি সরানো সম্ভব হয়েছে।

ছবি সংগৃহীত

এদিকে, দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া রেললাইনের স্লিপার অপসারণের কাজ করছেন কর্মীরা। রেলের কর্মীরা জানান, লাইনটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত স্লিপারগুলো সরানো হবে। পরে নতুন স্লিপার প্রতিস্থাপন করে সড়কটি সচল করা হবে। এতে কতক্ষণ লাগতে পারে, তা ধারণা করতে পারছেন না কর্মীরা।

এ ঘটনায় ট্রেনটির লোকোমাস্টার এমদাদুল হক ও সহকারী লোকোমাস্টার মো. সজীব আহত হয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে, জেলা প্রশাসন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিনটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বেলা দুইটায় ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নাশকতাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এটা অমানবিক কাজ। এরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের পাশে দাঁড়াব। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেব।’