ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেন গুরিয়ন বন্ধ: প্রতিশোধ শুরু
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ, সব ফ্লাইট ৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত
বিশ্ব ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ফের তীব্র রূপ নিচ্ছে। রোববার (২২ জুন) গভীর রাতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলের প্রধান বেসরকারি বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে দুই ধরণের জ্বালানিযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র, যার কারণে বিমানবন্দরটি নিরাপত্তার খাতিরে তৎক্ষণাৎ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আল-জাজিরা ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এই হামলায় শুধু বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকেই নয়, ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক গবেষণা কেন্দ্র, সহায়তা ঘাঁটি এবং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারকেও লক্ষ্য করা হয়। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধান বেসরকারি বিমান সংস্থা এল আল (El Al), আরকিয়া (Arkia) এবং ইসরাইর (Israir) ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত তাদের সমস্ত সিডিউলড ফ্লাইট স্থগিত রাখবে। এই সময়ে কেবলমাত্র যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সীমিত ফ্লাইট পরিচালিত হবে। অন্যান্য সকল ফ্লাইট বাতিল থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার যাত্রী বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন এবং বিমান সংস্থাগুলোকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ইরান ও ইসরায়েলের আকাশপথ এড়িয়ে নিরাপদ দূরবর্তী রুট গ্রহণ করছে, যার ফলে ভ্রমণের সময় ও খরচ বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তা শঙ্কা ব্যাপকভাবে বাড়ায় বিমান চলাচলে এই পরিবর্তন আসাটা স্বাভাবিক।
বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে, এবং বিমানবন্দরের আশেপাশে বেঙ্কার স্থাপন ও সুরক্ষা জোরদার করা হয়েছে।
তবে হামলার ফলে বিমান চলাচলে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলমান এই উত্তেজনা বিশ্ব বাজারে জ্বালানি মূল্য বাড়াতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে তেলের দাম কয়েক শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি এই আঞ্চলিক উত্তেজনার ফলে ব্যবসায়িক বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
জাতিসংঘ সাধারণ সম্পাদক শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অঞ্চল থেকে তাদের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছে।
আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান এয়ারলাইনগুলো মধ্যপ্রাচ্যের আকাশপথে উড়ানে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত আঞ্চলিক শান্তি বজায় থাকে, তবে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাল্টা হামলা বা উত্তেজনা বাড়লে স্থগিতাদেশ আরও বাড়তে পারে।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে ইসরায়েল ও ইরান উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় সম্মত হতে পারে।
বিশ্ব এখন নজর রাখছে মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনার উপর। আগামীদিনগুলোতে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করবে অনেক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন।