একটি একটি করে নিভে যাচ্ছে প্রদীপ: মুসলিম বিশ্বের নীরবতা ও আমাদের ভবিষ্যৎ
টুইট প্রতিবেদন: ২০০১ সাল, আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরু করল “সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ”। ওসামা বিন লাদেনের উপস্থিতির অজুহাতে পুরো একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হলো।
তখনও মুসলিম বিশ্ব নীরব। কেউ এগিয়ে এলো না প্রতিবাদে বা প্রতিরোধে। আফগানিস্তান হারাল তার স্বাধীনতা, তার নেতা, তার ভরসা।
২০০৩ সালে ইতিহাসের আরেকটি ভয়াল অধ্যায়—ইরাক। আমেরিকা বলল, সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। কিন্তু পরে প্রমাণ হলো, সে অভিযোগ ছিল মিথ্যা। তবুও সাদ্দাম শহীদ হলেন। ইরাক ভেঙে পড়ল।
মুসলিম বিশ্ব তখনও নীরব। কেবল নীরব নয়, অনেক রাষ্ট্র পরোক্ষভাবে এই আগ্রাসনে সহায়তাও করেছে।
২০১১ সালে সেই একই চিত্র লিবিয়ায়। মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আরব বসন্তের নামে একে একে জ্বলে উঠলো আগুন, নিভে গেলো আরও একটি মুসলিম রাষ্ট্রের নেতৃত্ব। লিবিয়া এখনো বিশৃঙ্খলার রাজ্যে পরিণত।
একই বছরে মিশরে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো জনগণের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসিকে। সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ক্ষমতা দখল করলেন। হাজার হাজার মানুষ রাবা স্কয়ারে শহীদ হলেন। মুসলিম বিশ্ব? তখনও নিশ্চুপ!
২০২৪ সালে হেলিকপ্টার “দুর্ঘটনায়” রহস্যজনকভাবে শহীদ হলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। মুসলিম বিশ্ব তখনও চুপ।
এবং এখন, ২০২৫। আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে ইসরায়েল আক্রমণ করছে ইরানকে। লক্ষ্য শুধু ইরানের পরমাণু স্থাপনা নয়—তাদের আত্মমর্যাদা, তাদের নেতৃত্ব, তাদের প্রতিরোধ শক্তি। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জীবন এখন হুমকির মুখে। তবুও, এখনও কোনো মুসলিম রাষ্ট্র এগিয়ে এলো না।
একই ধারা, একই পরিণতি
আমরা কি বুঝতে পারছি না, এক একটি করে নিভে যাচ্ছে প্রদীপ? আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন—প্রতিটা জায়গায় একই দৃশ্য। আর এখন ইরান।
পরবর্তী ধাপে কি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্ক? তখনও কি কেউ এগিয়ে আসবে না?
শেষ জামানার ইঙ্গিত?
ইসলামি পণ্ডিত ও গবেষকরা বহু আগেই বলে আসছেন, মুসলিম উম্মাহর বিভক্তি ও অবক্ষয় শেষ জামানার বড় আলামত। রাসূল (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণীতে এসেছে—”তোমরা সংখ্যায় অনেক হবে, কিন্তু তোমাদের কোনো শক্তি থাকবে না। তোমাদের শত্রুরা তোমাদের টুকরো টুকরো করে খাবে।”
সমাধান কোথায়?
সমাধান একটাই—ঐক্য।
মুসলিমরা যদি আজই এক না হয়, তবে আগামীর ইতিহাস আরো ভয়ংকর হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ধর্মীয় আলেম, সাধারণ মানুষ—সবার কাছে এখন সময় আত্মসমালোচনার। নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার।
আজ ইরান, কাল হয়তো আমাদের দেশ। একে একে নিভে যাচ্ছে মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরোধশক্তি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি—
“হে আল্লাহ! আপনি ইরানকে গায়েবি সাহায্যে বিজয় দিন, মুসলিম উম্মাহকে এক করুন। আমিন। ছুম্মা আমিন।”