ইরানের ঘাঁটি প্রস্তুত, মার্কিন হামলায় পাল্টা জবাব দেবে তেহরান — নিউ ইয়র্ক টাইমস
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ছায়া: বুধবার জাতির উদ্দেশে একটি টেলিভিশন ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ভাষণের শুরুতেই তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ইসরায়েলকে তার ভুলের জন্য শাস্তি পেতেই হবে।”
বিশ্ব ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে তাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে জোরালো হামলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইরান। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা ও একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
দুইজন ইরানি কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধে যোগ দেয়, তবে ইরান ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি দিয়ে প্রথম হামলা শুরু করবে। পরবর্তী লক্ষ্য হবে আরব দেশগুলোর ঘাঁটি, যেখান থেকে হামলায় অংশগ্রহণ করা হবে।
ইরানের কাছে রয়েছে এমনসব ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি, যা বাহরাইন, কাতার এবং আমিরাতের মার্কিন ঘাঁটিতে সহজেই আঘাত হানতে সক্ষম। হরমুজ প্রণালিতে মাইন স্থাপন, পারস্য উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করা — এসবও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি: সেনাবাহিনী উচ্চ সতর্কতায়
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে— যেমন ইউএই, জর্ডান, সৌদি আরব। উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে কমান্ডাররা।
তাছাড়া, তিন ডজনেরও বেশি যুদ্ধবিমান ইউরোপে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব বিমান ব্যবহার করা হতে পারে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে বা মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিতে নিরাপত্তা জোরদার করতে।
ইসরায়েল চাপ দিচ্ছে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে
ইসরায়েলের চাপেই যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়ানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েল যদি ইরানের শীর্ষ পরমাণু স্থাপনা ফোরদোতে হামলা চালায়, তাহলে ইরানপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা রেড সি-তে হামলা শুরু করবে। একইভাবে ইরাক ও সিরিয়ার ইরানঘনিষ্ঠ মিলিশিয়ারাও মার্কিন ঘাঁটি আক্রমণ করতে পারে।
ইরানের হুঁশিয়ারি: যুদ্ধের দায় নিতে হবে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আমাদের ওপর হামলা করে কেউ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারবে না। আমাদের জনগণের ওপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”
তিনি ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনালাপে আরও বলেন, “যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে তার দায় নিতে হবে ইসরায়েল ও তার পৃষ্ঠপোষকদের।”
ইসরায়েলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে একটি টেলিভিশন ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ভাষণের শুরুতেই তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ইসরায়েলকে তার ভুলের জন্য শাস্তি পেতেই হবে।”
খামেনি বলেন, “ইরান চাপিয়ে দেওয়া যেকোনো যুদ্ধের মতোই চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান নেবে। এই জাতি কারও চাপের মুখে কখনোই আত্মসমর্পণ করেনি এবং করবে না।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকেও সরাসরি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “মার্কিনদের জানা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপূরণীয় পরিণতি বয়ে আনবে।”
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য যেন বারুদের স্তূপ। ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের আগুনে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠছে। সামনে বিশ্ব কি আরও বড় এক সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে?