রাশিয়া-ইরান অস্ত্র জোটে নতুন সংকট
রাশিয়া-ইরান অস্ত্র জোটে নতুন সংকট: ইসরায়েলের ওপর হামলার শঙ্কায় ক্রেমলিনের ‘সতর্ক ভারসাম্য’ কূটনীতি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও ঘূর্ণিঝড় তৈরি করছে মধ্যপ্রাচ্য। ইরান ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়াও পড়ে গেছে এক জটিল কূটনৈতিক ‘দ্বৈত বন্ধন’-এর মাঝে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া এখন এক “সতর্ক ভারসাম্য রক্ষার কঠিন খেলায়” মেতে উঠেছে, কারণ একদিকে তারা ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, অন্যদিকে ইসরায়েলের সাথেও রয়েছে কার্যকর কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক।
রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহে নতুন আশঙ্কা
সম্প্রতি একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
“যদি রাশিয়া ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে, সেগুলো ইসরায়েলের দিকে মোতায়েন হতে পারে – যা ক্রেমলিন চায় না।”
রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইরানকে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়ে মুখ খোলেনি, তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইরানের কাছ থেকে তারা ড্রোন ও সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে। এ সম্পর্ক আরও গভীর হলে পশ্চিমাদের চোখে এটি এক নতুন “সামরিক জোট” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক: এক কঠিন বন্ধুত্ব
রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্ক ইতিহাসে বহুবার জটিল হয়েছে। তবে বিশেষ করে সিরিয়া ইস্যুতে উভয় দেশের মধ্যে একটি “অপারেশনাল ডি-কনফ্লিক্ট মেকানিজম” ছিল, যাতে দুই দেশের সামরিক বাহিনী সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায় না। এখন, যদি ইরানের মাধ্যমে রাশিয়ার অস্ত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেই নিরাপত্তা কাঠামো ধসে পড়তে পারে।
ইরান-রাশিয়া সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা কেন?
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইরানের তৈরি ড্রোন (Shahed-136) ব্যবহার করেছে।
ইরান রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সময় বিভিন্ন লজিস্টিক সহায়তা দিয়েছে।
ইরান চায় রাশিয়া তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে আরও সরাসরি সহায়তা করুক।
রাশিয়ার কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ক্রেমলিন এখন এক বিপজ্জনক ভারসাম্যে আটকে পড়েছে:
ইরানকে রক্ষা ও অস্ত্র সহযোগিতা করতে চায়, কারণ এটি পশ্চিমা ফ্রন্টে রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদার।
কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হলে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বিশ্লেষক ভ্লাদিমির ফ্রলভ বলেন,
“ক্রেমলিন চায় না, ইরান তার অস্ত্র ব্যবহার করে সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করুক – কারণ এতে রাশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।”
রাশিয়া এখন এক কূটনৈতিক দড়ি হাঁটছে। ইরান ও ইসরায়েল – উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে অস্ত্র সরবরাহ ও যুদ্ধনীতি নির্ধারণ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। সামনে মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা বাড়লে রাশিয়াকে হয়তো একপক্ষ বেছে নিতে হতে পারে – যার পরিণতি বৈশ্বিক কূটনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে।