ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়ছে: কংগ্রেস বনাম হোয়াইট হাউস-ক্ষমতার সংঘাত

সেনেটর টিম কেইনের নতুন বিল: ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে চান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে ডেমোক্রেট সিনেটর টিম কেইন–এর প্রস্তাবিত একটি বিল। বিলে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে চান, তবে তাকে প্রথমে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।

বিলের মূল প্রস্তাবনা:

সিনেটর কেইন বলছেন,
“আমরা যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক হামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এককভাবে নিতে দিতে পারি না। সংবিধান অনুযায়ী, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ বেআইনি।”

তিনি যুক্তি দেন যে, বিগত বছরগুলোতে প্রেসিডেন্টদের হাতে অত্যধিক যুদ্ধক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যা “সংবিধানের ভারসাম্য ও যুদ্ধক্ষমতার অপব্যবহার” এর ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়ছে

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষের পটভূমিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কও বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলেছেন,

“আমরা সব অপশন টেবিলে রেখেছি।”
এমন মন্তব্যই ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে যে, ট্রাম্প হয়তো কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি সামরিক হামলা চালাতে পারেন।

কংগ্রেস বনাম হোয়াইট হাউস: ক্ষমতার সংঘাত

এই বিল কেবল ইরানের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে কংগ্রেসের ভূমিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেই আনা হয়েছে। বহু বছর ধরেই যুদ্ধ সম্পর্কিত ক্ষমতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ২০০১ সালের সন্ত্রাসবিরোধী AUMF আইন এখনো কার্যকর, যা প্রেসিডেন্টদেরকে ব্যাপক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

টিম কেইনের অতীত ভূমিকা:

সিনেটর টিম কেইন ইতোপূর্বেও বহুবার যুদ্ধক্ষমতা হ্রাস করে কংগ্রেসের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন। তিনি ২০২০ ও ২০২3 সালেও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।

প্রতিক্রিয়া:

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি: বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাট সেনেটর এই বিলকে সমর্থন করেছেন।

রিপাবলিকান প্রতিক্রিয়া: রিপাবলিকান নেতারা বলছেন, বর্তমান নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে প্রেসিডেন্টের হাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিত।

হোয়াইট হাউস:

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো এই বিল সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য করেননি, তবে তার ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, “প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে সক্ষম।”

পরবর্তী পদক্ষেপ:

বিলটি এখন সিনেটে বিতর্কের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর পর হাউজে যাবে এবং সর্বশেষে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হতে পারে — যদিও প্রেসিডেন্ট এতে ভেটো দিতে পারেন বলেই ধারণা।

বিশ্বজুড়ে যখন মধ্যপ্রাচ্য অস্থির, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও চলছে লড়াই। যুদ্ধের আগে কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার এই বিল ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।