উত্তরবঙ্গ থেকে উপদেষ্টা না হলে নির্বাচন বয়কটের হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতি‌বেদক: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ উত্তাপ ছড়াল উত্তরের কয়েকটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া এক স্পষ্ট হুঁশিয়ারিতে—উত্তরবঙ্গ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা সদস্য অন্তর্ভুক্ত না হলে তারা নির্বাচন বয়কটের পথে হাঁটবে।

উপদেষ্টার দাবিতে জোরালো অবস্থান:

রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরাঞ্চলের অন্তত ১২টি জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী ফোরাম এবং নাগরিক প্ল্যাটফর্মের নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গ অবহেলিত। এই অঞ্চলের জনগণের আস্থা ফেরাতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে উত্তরাঞ্চলের একজন গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও জনপ্রিয় ব্যক্তিকে রাখতে হবে। অন্যথায় এই নির্বাচন হবে একতরফা এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক বার্তা:

সম্প্রতি রাজশাহী নগরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, “উত্তরবঙ্গ থেকে কেউ উপদেষ্টা না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়, বরং বয়কটই হবে একমাত্র উত্তর।” রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি, রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ঠাকুরগাঁও চেম্বারের নেতা এবং রংপুর বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের প্রতিনিধিসহ অন্তত ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া:

বিরোধী রাজনৈতিক জোটের একাধিক নেতাও এই দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। একটি দলের মহাসচিব বলেন, “উত্তরবঙ্গ শুধু ভোটের সময় মনে পড়লে হবে না। আজ উত্তরবঙ্গের সম্মান নিশ্চিত করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদে যোগদানের মাধ্যমে।” অপরদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এই দাবি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। তবে উপদেষ্টা নির্বাচন হবে সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায়।”

নির্বাচন কমিশনের নীরবতা:

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে কমিশনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, উপদেষ্টা প্যানেল গঠনের বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতামত:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করা হলে উত্তরাঞ্চলে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে। আর তার প্রভাব জাতীয় ফলাফলেও পড়বে। সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, “এটা শুধু রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং দীর্ঘদিনের একটি সাংগঠনিক বঞ্চনার প্রতিফলন। এই বার্তাকে গুরুত্ব না দিলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

উত্তরবঙ্গের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা দাবির এই কণ্ঠস্বর আসন্ন নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও নির্বাচন কমিশন কীভাবে এই দাবির প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আদৌ কোনো উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি উপদেষ্টা প্যানেলে স্থান পান কিনা।