বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
জুলাই সনদ তৈরির কাজেও অগ্রগতি, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়েও উদ্যোগের আভাস
টুইট ডেস্ক: তিনটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার ( ১৬ জুন) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে তিনি এই নির্দেশ দেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। আরও ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
তিনটি নির্বাচন তদন্তের আওতায়
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনারগণ এবং ইসি সচিবালয়ের তৎকালীন সচিবদের দায়-দায়িত্ব নিরূপণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি অবিলম্বে গঠন করা হবে। উদ্দেশ্য—নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে কারা জড়িত ছিলেন, তা খুঁজে বের করে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে বলেন, “সকল রাজনৈতিক পক্ষ একমত হয়েছে যে অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়।”
জুলাই সনদ: চূড়ান্ত পর্বে
বৈঠকে জুলাই সনদ তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “বেশকিছু মৌলিক বিষয়ে ইতোমধ্যেই ঐকমত্য হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সনদ চূড়ান্ত করে তা জাতির সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “সারা দেশ এই সনদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আশা করি, জুলাই মাসের মধ্যেই আমরা এটি উপস্থাপন করতে পারব।”
লন্ডন সফরে প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া
ড. ইউনূস তাঁর সদ্য সমাপ্ত লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন বৈঠকে। তিনি জানান, “প্রবাসী বাংলাদেশিরা সংস্কার ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উৎসাহী।”
তিনি বলেন, “প্রবাসীরা জিজ্ঞেস করছেন—আমরা ভোট দিতে পারব তো? আমরা পোস্টাল ব্যালটসহ সব অপশন বিবেচনা করছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসতে হবে।”
জবাবদিহিতার নতুন ধারা
বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের নির্বাচনের বিষয়ে তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার পদক্ষেপ দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করতে পারে। একাধিক কমিশন সদস্য বৈঠকে বলেন, “সংবিধান, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র—এই তিনটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া সামনে এগোনো সম্ভব নয়।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে নতুন গতি আনল। বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে তদন্ত, জুলাই সনদ চূড়ান্তকরণ ও প্রবাসীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে এই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।