আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ড. ইউনূসের, হতাশ টিউলিপ

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সাক্ষাতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন টিউলিপ।

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ‘আদালতের বিষয়’ এবং তিনি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন।

বিবিসির সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি কি এই সপ্তাহে তার চার দিনের যুক্তরাজ্য সফরের সময় সিদ্দিকের সাথে দেখা করবেন কিনা, জবাবে ইউনূস বলেন, না, করব না, কারণ এটা আইনি প্রক্রিয়া। আমি আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে চাই না। প্রক্রিয়াটি চলতে থাকুক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আদালতের বিষয়। আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে মামলা চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে কিনা, অথবা তা বাতিল করার জন্য।

প্রসিকিউটরদের আরও স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং সিদ্দিককে অপরাধের প্রমাণ দেওয়া উচিত কিনা-এই প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে এবং তারা সঠিক কাজটিই করছে।

যদি সিদ্দিক বাংলাদেশে কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার প্রত্যর্পণ চাওয়া হবে কিনা- এই প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বলেন, যদি এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়, তবে অবশ্যই।

এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ইউনূস তার সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তিনি হতাশ।

তিনি বলেন, মিডিয়ার কাছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই, কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তিনি (ইউনূস) সে প্রতিহিংসার কেন্দ্রে রয়েছেন। যদি এটা প্রকৃত আইনি প্রক্রিয়া হতো, তবে তারা আমার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত, ঢাকায় এমন এক ঠিকানায় ভুয়া চিঠিপত্র পাঠাত না, যেখানে আমি কখনও থাকিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি তিনি এখন সংবাদমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার অভ্যাস বন্ধ করার ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে কাজ করবেন এবং আদালতকে এটা প্রমাণ করার সুযোগ দেবেন যে তাদের তদন্তের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই – আমি একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের সংসদের একজন গর্বিত সদস্য।

এ বছরের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নৈতিক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। তার প্রতিবেদনে ‘কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ বলা হলেও টিউলিপের আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে সম্ভাব্য সুনামের ক্ষতির বিষয়ে সতর্কতা জানানো হয়।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দাবি, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড) অবৈধভাবে পাচার হয়েছে, এর একটি বড় অংশই যুক্তরাজ্য পৌঁছেছে।

এই অভিযোগের তদন্তে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ করেছে। ড. ইউনূস বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার এই প্রচেষ্টায় অত্যন্ত সহযোগিতামূলক। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক দুর্নীতি সমন্বয় কেন্দ্র (আইএসিসিসি) বাংলাদেশের অনুসন্ধানে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার বৈঠক হয়নি। এই বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমি জানি না, আমি হতাশ নাকি তিনি হতাশ। এটা এক প্রকার সুযোগ হারানো। তাই আমি বলছি, বাংলাদেশে এলেই হয়তো এই পরিস্থিতি অনুভব করা যেত।

স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক না হওয়ার বিষয়ে ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এমন কোনো ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি বলে মনে হয় না। সম্ভবত তিনি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত।