লাইভ চলাকালে সাংবাদিকের পায়ে গুলি

টুইট ডেস্ক: বিক্ষোভকে কভার করতে ছিলেন এক রিপোর্টার। সরাসরি সম্প্রচারে বিক্ষোভের খবর তুলে ধরছিলেন তিনি। এমন সময় ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। লাইভ সম্প্রচারের মাঝেই হঠাৎ তার পায়ে গুলি লাগে। পরে জানা যায়, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটই রিপোর্টারের গায়ে লেগেছে। এই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ায় মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, যেখানে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভের কভারেজে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নাইন নিউজ (Nine News)-এর মার্কিন সংবাদদাতা লরেন টোমাসি (Lauren Tomasi)।

স্থানীয় সময় রোববার (০৮ জুন) তিনি ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি প্রতিবেদন করছিলেন, সেই সময়ই তার পায়ে রাবার বুলেট লাগে। খবর এনডিটিভি।

ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তপ্ত পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে টোমাসি বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলা মুখোমুখি অবস্থানের পর পরিস্থিতি এখন দ্রুত অবনতি হচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এলএপিডি) ঘোড়ায় চড়ে এসেছে, রাবার বুলেট ছুড়ছে বিক্ষোভকারীদের দিকে, তাদের সরিয়ে দিচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কেন্দ্র থেকে। ঠিক এই মুহূর্তেই তার পায়ে গুলি লাগে।

ঘটনার পর এক প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাকে চিৎকার করে বলেন, তুমি রিপোর্টারকে গুলি করেছ! এরপর টোমাসির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিলে তিনি উত্তর দেন, আমি ঠিক আছি।

ঘটনার পরবর্তীতে নাইন নিউজ (Nine News) এক বিবৃতিতে জানায়, লরেন টোমাসি ও তার ক্যামেরা অপারেটর নিরাপদে আছেন এবং তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকবেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ঘটনা সাংবাদিকতার ঝুঁকিপূর্ণ বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে এবং সত্য-তথ্য তুলে ধরার তাদের ভূমিকা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা স্মরণ করিয়ে দেয়।

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শুরু হয়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য মিলিটারি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে এনে লস অ্যাঞ্জেলেসে সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এই সিদ্ধান্তকে ‘উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।

তীব্র প্রতিবাদের মুখে এলএপিডি পুরো ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকাকে ‘অবৈধ সমাবেশ’ ঘোষণা করে এবং জনসাধারণকে তাৎক্ষণিক এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে মুখোশ পরা বিক্ষোভকারীদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এর আগে টানা দুই দিন ধরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়, যেখানে ফেডারেল এজেন্টরা ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। মূলত, লাতিনো জনগোষ্ঠীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অভিবাসীদের গণগ্রেপ্তারের ঘটনাই এই বিক্ষোভের মূল কারণ।

ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। তিনি একাধিকবার তাদের ‘দানব’ ও ‘প্রাণী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বিক্ষোভ কভার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবুও, লরেন টোমাসি ও তার দল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, যা সাংবাদিকতার সাহসিকতা ও দায়বদ্ধতার একটি শক্ত বার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।